ইওয়ান ও চার্লির নতুন অভিযান: ইউরোপে পুরনো বাইক নিয়ে ফিরছেন দুই বন্ধু!

মোটরসাইকেলে বিশ্বভ্রমণে খ্যাত ইওয়ান ম্যাকগ্রেগর ও চার্লি বুরম্যান আবারও ফিরছেন, তবে এবার একটু ভিন্ন রূপে। তাঁদের নতুন টেলিভিশন সিরিজ ‘লং ওয়ে হোম’-এ তাঁরা ইউরোপের ১৭টি দেশে পুরনো দিনের মোটরসাইকেল নিয়ে এক দারুণ ভ্রমণে বের হয়েছেন। বিখ্যাত এই জুটি তাঁদের এই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দর্শকদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে প্রস্তুত।

‘লং ওয়ে হোম’ মূলত তাঁদের জনপ্রিয় ভ্রমণ বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র সিরিজের চতুর্থ কিস্তি। এর আগে তাঁরা ‘লং ওয়ে রাউন্ড’, ‘লং ওয়ে ডাউন’, এবং ‘লং ওয়ে আপ’-এর মতো সিরিজে বিশ্বজুড়ে মোটরসাইকেল নিয়ে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। এই সিরিজগুলো ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা লাভ করেছে।

নতুন সিরিজে তাঁরা পুরনো দিনের মোটরসাইকেল বেছে নিয়েছেন, যা তাঁদের ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। ইওয়ান ম্যাকগ্রেগর একটি ১৯৭৪ সালের পুরনো মোটো গুজি এলডোরাডো (Moto Guzzi Eldorado) মডেলের মোটরসাইকেল ব্যবহার করছেন, যা একসময় লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ বিভাগ ব্যবহার করত।

অন্যদিকে, চার্লি বুরম্যান একটি পুরনো বিএমডব্লিউ আর৭৫/৫ (BMW R75/5) মডেলের মোটরসাইকেল বেছে নিয়েছেন।

সিরিজটি শুরু হয়েছে স্কটল্যান্ড থেকে, এরপর হল্যান্ড, নরডিক দেশগুলি, আর্কটিক সার্কেল, বাল্টিক অঞ্চল এবং আল্পস পর্বতমালা ঘুরে তাঁরা ফ্রান্সে পৌঁছেছেন।

পুরনো দিনের মোটরসাইকেল ব্যবহারের কারণ হিসেবে ইওয়ান ম্যাকগ্রেগর জানান, “পুরনো বাইকগুলো সারানো সহজ। রাস্তার পাশে বসে সামান্য মেরামত করে আবার চালানো যায়। কিন্তু ইলেকট্রিক বাইকের ক্ষেত্রে তেমনটা সম্ভব নয়, যা মধ্য আমেরিকায় ভ্রমণের সময় আমরা বুঝেছিলাম।

এই সিরিজে তাঁরা ভাইকিংদের পোশাক পরে নরওয়েতে কুঠার ছোড়ার মতো মজাদার অভিজ্ঞতা উপভোগ করেছেন। এছাড়াও, আমস্টারডামের কাছে একটি উইন্ডমিলের পাশে ক্যাম্পিং, আর্কটিক সার্কেলের একটি হিমবাহের পাশে কায়াকিং, ফিনল্যান্ডে লগ-রোলিং এবং পোল্যান্ডে ট্যাটু করার মতো বিভিন্ন আকর্ষণীয় দৃশ্যে অংশ নিয়েছেন।

ভ্রমণের সময় তাঁরা প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাওয়ার সুযোগ পান। ইওয়ান ম্যাকগ্রেগর বলেন, “মোটরসাইকেলে চড়ে যখন প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়া যায়, তখন ঠান্ডায় ঠান্ডা লাগে, বৃষ্টিতে ভিজে যেতে হয়। এটা একটা দারুণ অভিজ্ঞতা।

তাঁরা প্রায় দু’মাস ধরে এই ভ্রমণে ছিলেন এবং এই সময়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন।

এই সিরিজের মাধ্যমে তাঁরা তাদের প্রথম সিরিজ ‘লং ওয়ে রাউন্ড’-এর ২০ বছর পূর্তি উদযাপন করছেন, যা ২০০৪ সালে প্রচারিত হয়েছিল।

সেই সিরিজে তাঁরা লন্ডন থেকে শুরু করে ইউরোপ, ইউক্রেন, কাজাখস্তান, মঙ্গোলিয়া এবং রাশিয়া হয়ে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে আলাস্কা পর্যন্ত গিয়েছিলেন।

‘লং ওয়ে হোম’-এ পুরনো দিনের মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হলেও, তাঁরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পিছপা হননি। জিপিএস, গো-প্রো ক্যামেরা, ড্রোন এবং ইনস্টা৩৬০ ক্যামেরার মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাঁরা ভ্রমণের প্রতিটি মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করেছেন।

চার্লি বুরম্যান বলেন, “আমরা পুরনো মোটরসাইকেল ভালোবাসি, তবে গল্প বলার জন্য আধুনিক প্রযুক্তিকেও কাজে লাগাই।

ভ্রমণের পাশাপাশি, তাঁরা পরিবেশ এবং সমাজের প্রতি তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করেছেন। কোপেনহেগেনে ইউনিসেফের একটি কেন্দ্রে পরিদর্শনের মাধ্যমে তাঁরা শিশুদের কল্যাণে কাজ করা সংস্থাটির কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেছেন।

এছাড়াও, তাঁরা হিমবাহের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কেও ধারণা লাভ করেছেন।

ইওয়ান ম্যাকগ্রেগর মনে করেন, “আমরা বিশ্বজুড়ে ঘুরেছি, কিন্তু এখনো অনেক কিছু দেখা বাকি।

তাঁর এই কথা থেকেই বোঝা যায়, তাঁরা এখনো অনেক নতুন অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে চান এবং দর্শকদের সেই অভিজ্ঞতা দেখাতে চান।

মোটরসাইকেলে বিশ্বভ্রমণের এই গল্প শুধু একটি ভ্রমণ কাহিনী নয়, বরং এটি বন্ধুত্ব, প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা এবং জীবনের নতুন দিক উন্মোচনের এক দারুণ দৃষ্টান্ত। এই সিরিজ দর্শকদের নতুন কিছু দেখতে ও জানতে উৎসাহিত করবে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *