১০০০ সৈন্যকে বিতাড়িত করার নির্দেশ, সামরিক বাহিনীতে রূপান্তরকামীদের নিয়ে চরম সিদ্ধান্ত!

মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর (পেন্টাগন) তাদের সামরিক বাহিনী থেকে ১,০০০ জন পর্যন্ত রূপান্তরকামী সেনাকে সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক নতুন নির্দেশনায় এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।

এই পদক্ষেপের ফলে সামরিক বাহিনীতে থাকা রূপান্তরকামীদের শনাক্ত করতে তাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত রেকর্ড খতিয়ে দেখা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে সামরিক বাহিনীতে রূপান্তরকামীদের উপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার পক্ষে রায় দেয়। এর পরেই পেন্টাগন এই সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত হয়।

প্রতিরক্ষা সচিব পেট হেগসেথ এক বিবৃতিতে জানান, সামরিক বাহিনী থেকে ‘উগ্রতা’ এবং ‘দুর্বলতা’ দূর করা হবে।

তিনি আরও বলেন, “এখানে আর কোনো লিঙ্গবাচক সর্বনাম (pronoun) ব্যবহার করা হবে না।”

পেন্টাগন সূত্রে জানা গেছে, ঠিক কতজন রূপান্তরকামী সেনা বর্তমানে কর্মরত আছেন, তা বলা কঠিন।

তবে যাদের ‘জেন্ডার ডিসফোরিয়া’ (gender dysphoria) ধরা পড়েছে, তাদের শনাক্ত করা হবে।

এই রোগ হলো এমন একটি অবস্থা, যেখানে একজন ব্যক্তির লিঙ্গপরিচয় তার জন্মগত লিঙ্গের সঙ্গে মেলে না। এমন ব্যক্তিদের চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য সামরিক বাহিনীর কাছে রয়েছে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ৯ই ডিসেম্বর, ২০২৪ পর্যন্ত প্রায় ৪,২৪০ জন সেনা সদস্যের মধ্যে জেন্ডার ডিসফোরিয়ার লক্ষণ পাওয়া গেছে।

এছাড়াও, এই সময়ে প্রায় ২.১ মিলিয়ন সেনা সক্রিয় দায়িত্বে ছিলেন।

নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সেনা সদস্যদের মধ্যে যারা নিজেদের রূপান্তরকামী হিসেবে পরিচয় দিতে চান, তাদের জন্য কিছু সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সক্রিয় দায়িত্বে থাকা সেনাদের আগামী ৬ই জুনের মধ্যে এবং ন্যাশনাল গার্ড ও রিজার্ভ বাহিনীর সদস্যদের ৭ই জুলাইয়ের মধ্যে এই বিষয়ে তথ্য জমা দিতে হবে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে যারা সামরিক বাহিনী ত্যাগ করতে বাধ্য হবেন, তাদের মধ্যে জেন্ডার ডিসফোরিয়া আছে এমন কেউ নতুন করে আর বাহিনীতে যোগ দিতে পারবেন না।

তবে, কিছু ক্ষেত্রে এই নিয়ম শিথিল করারও সুযোগ রাখা হয়েছে।

যুদ্ধকালীন গুরুত্বপূর্ণ কাজে সরাসরি জড়িত, এমন রূপান্তরকামী ব্যক্তি বিশেষ প্রমাণ সাপেক্ষে বাহিনীতে থাকতে পারবেন।

এছাড়াও, কোনো সেনা সদস্য যদি জেন্ডার ডিসফোরিয়ায় আক্রান্ত হয়েও অস্ত্র চালনার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালিয়ে যেতে সক্ষম হন, তবে তিনিও বাহিনীতে বহাল থাকতে পারবেন।

এক্ষেত্রে, তাকে অন্তত ৩৬ মাস ধরে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি তার জৈবিক লিঙ্গে স্থিতিশীল আছেন এবং কোনো মানসিক distress অনুভব করছেন না।

পেন্টাগনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০১৬ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত রূপান্তরকামীদের চিকিৎসার জন্য প্রায় ৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে মনোচিকিৎসা, হরমোন থেরাপি এবং অস্ত্রোপচারের মতো বিষয়গুলো।

এই সিদ্ধান্তের ফলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

তাদের মতে, এই পদক্ষেপ সামরিক বাহিনীতে বৈষম্য তৈরি করবে এবং রূপান্তরকামীদের অধিকারকে খর্ব করবে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *