যুদ্ধবিরতির ঘোষণার মধ্যেই ইউক্রেনে হামলার অভিযোগ, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভ
ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার ঘোষিত তিন দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার মধ্যেই হামলার অভিযোগ উঠেছে। ইউক্রেনের সেনারা বলছেন, রুশ বাহিনী যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
তাদের দাবি, রাশিয়া এই যুদ্ধবিরতির আড়ালে সৈন্যদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছে।
বুধবার মধ্যরাতের পর থেকে রাশিয়ার পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করা হয়। তবে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে ন্যাশনাল গার্ডের পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে থাকা সেনারা রুশ প্রেসিডেন্টের এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণার ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না।
তাদের একজন ড্রোন ইউনিটের কমান্ডার কির বলেন, “আমরা তাকে বিশ্বাস করি না।” ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও এর আগে বলেছিলেন, তিনি কেবল ৩০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতি চান।
বৃহস্পতিবার দিনের বেলাতেও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা ফ্রন্ট লাইনে হামলার খবর জানান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা জানিয়েছেন, সারা দিনে ইউক্রেনীয় সেনা অবস্থানে ৫০০ বারের বেশি হামলা হয়েছে।
এর মধ্যে ১০টির বেশি ছিল আকাশ থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। এর মধ্যে একটি হামলায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সুমি অঞ্চলে ৫৫ বছর বয়সী এক নারী নিহত হয়েছেন এবং তার ছেলে আহত হয়েছেন।
এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন অঞ্চলে একটি ড্রোন হামলায় ৩৫ বছর বয়সী এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
যেখানে হামলার ঘটনা ঘটছে, সেই এলাকাটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। কির এবং তার সহকর্মীরা রাশিয়ার হামলার ওপর নজর রাখছিলেন।
তাদের ডেস্কে এবং দেয়ালে লাগানো মনিটরে নজরদারি ড্রোন থেকে আসা ১০০টির বেশি লাইভ ফিড দেখা যাচ্ছিল, যা ফ্রন্ট লাইনের প্রায় অর্ধেক এলাকা জুড়ে সক্রিয় ছিল।
শুধুমাত্র দোনেৎস্ক অঞ্চলের দিকেই ৬০টির মতো ক্যামেরা তাক করা ছিল। খারাপ আবহাওয়ার কারণে রাতে কেবল ‘ম্যাভিক’ ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছিল।
সাধারণত তারা আরও বেশি ফিড পরীক্ষা করে থাকেন।
মধ্যরাতের কিছু সময় পরেই সেনারা রাশিয়ার তৎপরতা সম্পর্কে খবর দেন। পোক্রোভস্কের কাছে আর্টিলারি হামলা হয়েছে।
তোরেৎস্কের কাছে একটি ‘গ্রাড’ রকেট এবং স্লোভিয়ানস্কের কাছেও আর্টিলারি হামলার খবর পাওয়া গেছে।
কির জানিয়েছেন, হামলার তীব্রতা কম ছিল, তবে রাশিয়ার নজরদারি ড্রোনগুলোর ব্যাপক সক্রিয়তা দেখা গেছে।
কির আরও বলেন, রাশিয়ার আসল উদ্দেশ্য পরিষ্কার। এর আগে ইস্টার উৎসবে রাশিয়া সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল।
সেই সুযোগে তারা তাদের সেনাদের জন্য রসদ সরবরাহ করে এবং সৈন্যদের নতুন করে একত্রিত করে। এর ফলস্বরূপ তারা সুবিধা পেয়েছিল এবং ইউক্রেনীয় সেনারা কিছু জায়গা হারিয়েছিল।
এবারও যুদ্ধবিরতির সময় তারা একই কাজ করতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা বলছেন, তাদের হাতে এমন প্রমাণ রয়েছে যা প্রমাণ করে যে ক্রেমলিনের শান্তি ফিরিয়ে আনার কোনো ইচ্ছা নেই।
কয়েক সপ্তাহ ধরে তাদের নজরদারি কেন্দ্র থেকে দেখা যাচ্ছে, রাশিয়া ফ্রন্ট লাইনের কয়েক কিলোমিটার দূরে বিপুল সংখ্যক সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম জড়ো করছে।
তারা সম্প্রতি ধারণ করা একটি ভিডিও দেখিয়েছেন, যেখানে গাছের সারির পাশে অস্থায়ী ছাউনি, তাঁবু এবং সামরিক যান দেখা যাচ্ছে।
কির আরও বলেন, ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের কথা স্মরণ করে দেখুন। প্রথমে তারা মিথ্যা বলেছিল, এখনো তারা মিথ্যা বলছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন