প্রিয়জনের স্মৃতিভ্রম হলে কি করবেন? এখনই জানুন!

বাংলাদেশে বয়স্ক স্বজনদের স্মৃতি দুর্বল হয়ে যাওয়া একটি পরিচিত সমস্যা। অনেক পরিবারেই দেখা যায়, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনজনদের স্মৃতিশক্তি কমে যাচ্ছে।

কখনো তারা পরিচিত মানুষটিকেও চিনতে পারেন না, আবার কোনো ঘটনা মনে করতে পারেন না। এমন পরিস্থিতিতে কী করা উচিত, সেই বিষয়ে কিছু জরুরি পরামর্শ নিয়ে আজকের আলোচনা।

যদি আপনার মনে হয় আপনার কোনো আপনজনের স্মৃতিশক্তির সমস্যা হচ্ছে, তবে সবার প্রথমে শান্তভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করুন। তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন এবং বোঝানোর চেষ্টা করুন যে, আপনি তাদের পাশে আছেন।

তাদের সম্মান বজায় রেখে চিকিৎসার জন্য উৎসাহিত করুন।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিশক্তির কিছু পরিবর্তন স্বাভাবিক। তবে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ (dementia) একটি গুরুতর সমস্যা।

ডিমেনশিয়ার কারণে স্মৃতি এবং চিন্তাভাবনার ক্ষমতা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি কমে যায়। এই পরিবর্তনগুলো একজন আপনজনের মধ্যে দেখলে তা খুবই কষ্টের হতে পারে, বিশেষ করে যদি তারা নিজেরাই তাদের সমস্যাটি বুঝতে না পারেন।

করণীয়:

  • অন্যদের সাথে আলোচনা করুন: আপনার উদ্বেগের কথা পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে আলোচনা করুন। তাদের কাছ থেকে শুনুন, তারা একই ধরনের কোনো সমস্যা দেখছেন কিনা। আলোচনা আপনাকে একটি সিদ্ধান্তে আসতে সাহায্য করবে এবং পরবর্তীতে আপনজনের সাথে কথা বলার জন্য সঠিক ব্যক্তি নির্বাচন করতে পারবেন। তবে, আলোচনা করার সময় আপনজনের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করা জরুরি।
  • আলোচনার পরিকল্পনা করুন: কার সাথে কথা বলবেন এবং কীভাবে বলবেন, তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখুন। আপনার উদ্বেগের কারণগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরুন। উদাহরণস্বরূপ, তারা কোনো ঘটনা মনে রাখতে পারছেন না বা পরিচিত কাউকে চিনতে পারছেন না, এমন কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করতে পারেন। আলোচনার সময় তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকুন।
  • আলোচনা শুরু করুন: কথা বলার জন্য এমন একটি সময় নির্বাচন করুন যখন আপনি এবং আপনার স্বজন দুজনেই শান্ত ও স্বাভাবিক থাকবেন। কোনো তাড়াহুড়ো বা বিরক্তি যেন না থাকে। এমন একটি জায়গা বেছে নিন যেখানে তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। আপনি তাদের জিজ্ঞেস করতে পারেন, “আপনি কি আজকাল কোনো কিছুতে আগের মতো পারছেন না, বা কোনো পরিবর্তন অনুভব করছেন?” তাদের বোঝান যে, আপনি তাদের সাহায্য করতে চান।
  • চিকিৎসার জন্য উৎসাহিত করুন: ডিমেনশিয়া সন্দেহ হলে, আপনার প্রধান লক্ষ্য হবে তাদের একজন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া। তাদের বোঝান যে, দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার সুবিধা হবে। আপনি তাদের বলতে পারেন, “সমস্যা যাই হোক না কেন, দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো।” মনে রাখবেন, তাদের সমস্যার কারণ ডিমেনশিয়া ছাড়াও অন্য কিছুও হতে পারে, যেমন – ডিপ্রেশন বা ভিটামিন বি১২-এর অভাব। তাদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারেন এবং তাদের আশ্বস্ত করতে পারেন যে আপনি তাদের পাশে আছেন।
  • যদি তারা চিকিৎসা নিতে না চান: অনেক সময় ডিমেনশিয়ার আক্রান্ত ব্যক্তিরা তাদের সমস্যাটি স্বীকার করতে চান না। এমন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে। তাদের হয়তো আরও কিছু সময় দিতে হতে পারে। তবে, তাদের নিরাপত্তা নিয়ে আপনার উদ্বেগ থাকলে, যেমন – তারা গাড়ি চালাচ্ছেন অথবা ওষুধ সেবনে ভুল করছেন, সেক্ষেত্রে তাদের ডাক্তারের সাথে কথা বলা যেতে পারে। তাদের অনুমতি নিয়ে, আপনি ডাক্তারের সাথে তাদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন। আপনি বলতে পারেন, “আমি কি আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলতে পারি? তিনি হয়তো আমাকে কিছু পরামর্শ দিতে পারবেন।”
  • নিজের যত্ন নিন: যখন আপনি একজন বয়স্ক স্বজনের দেখাশোনা করেন, তখন নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও খেয়াল রাখা জরুরি। এই ধরনের পরিস্থিতিতে মানসিক চাপ আসতেই পারে। তাই নিজের জন্য সময় বের করুন এবং নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হোন। মনে রাখবেন, আপনি সুস্থ থাকলে তবেই আপনার স্বজনের ভালোভাবে দেখাশোনা করতে পারবেন।

ডিমেনশিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। দেরি করলে স্মৃতিশক্তি এবং অন্যান্য সমস্যাগুলো তাদের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলবে এবং তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।

তাই, পরিবারের সদস্যদের সাথে আলোচনা করুন, তাদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান এবং তাদের পাশে থাকুন।

তথ্য সূত্র: হেলথলাইন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *