শেয়ার বাজারে মিশ্র প্রবণতা দেখা গেছে, কারণ বিনিয়োগকারীরা চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আসন্ন বাণিজ্য আলোচনা এবং যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে হওয়া একটি বাণিজ্য চুক্তির দিকে তাকিয়ে ছিলেন।
শুক্রবার এশিয়ার শেয়ার বাজারে মিশ্র প্রভাব দেখা গেছে। এর মূল কারণ হলো, বিনিয়োগকারীরা চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আসন্ন বাণিজ্য আলোচনা এবং যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে হওয়া একটি বাণিজ্য চুক্তির দিকে তাকিয়ে ছিলেন।
বাজার বিশ্লেষকদের ধারণা, এই আলোচনা এবং চুক্তির ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা আসার আশঙ্কা হয়তো কিছুটা কমবে।
চীনের বাণিজ্য বিষয়ক কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে এপ্রিল মাসে দেশটির রপ্তানি বেড়েছে, তবে আগের মাসের তুলনায় এর গতি কিছুটা কমেছে।
বিশেষ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য প্রায় ২০ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ০.১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২২,৭৭৭.৮২-তে, এবং সাংহাই কম্পোজিট ইনডেক্স ০.৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩,৩৪৩.৩৮-এ।
অন্যদিকে, টোকিওর নিক্কেই ২২৫ সূচক ১.৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭,৪৯৩.৬৫-তে। সিউলের কোস্পি সূচক প্রায় অপরিবর্তিত ছিল, যা ২,৫৭৮.৬৪-এর কাছাকাছি অবস্থান করছে।
অস্ট্রেলিয়ার এসএন্ডপি/এএসএক্স ২০০ সূচক ০.৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮,২২৮.১০-এ। তাইওয়ানের তাইওয়েন সূচক ১.৭ শতাংশ বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক কমবে।
ওয়াল স্ট্রিটের ধারণা, এমন আরও অনেক চুক্তি হলে অর্থনীতির মন্দা এড়ানো যেতে পারে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল।
এসএন্ডপি ৫০০ সূচক ০.৬ শতাংশ বেড়ে ৫,৬৬৩.৯৪ পয়েন্টে পৌঁছেছে। ডাউ জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ ০.৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১,৩৬৮.৪৫-এ, এবং নাসডাক কম্পোজিট ১.১ শতাংশ বেড়ে ১৭,৯২৮.১৪ পয়েন্টে পৌঁছেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য চুক্তির ফলে যুক্তরাজ্যের পণ্যগুলোর ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকবে, তবে যুক্তরাজ্যের গাড়ির ওপর কর কমানো হবে।
এর বিনিময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে গরুর মাংস, ইথানল এবং অন্যান্য পণ্য প্রবেশাধিকার পাবে।
শেয়ার বাজারের এই উত্থানের পেছনে বাণিজ্য চুক্তি ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কোম্পানির ভালো মুনাফার খবরও ভূমিকা রেখেছে।
উদাহরণস্বরূপ, ট্যাকটিক্যাল সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক কোম্পানি অ্যাক্সন এন্টারপ্রাইজ তাদের সফটওয়্যার ও সেবার প্রসারের কারণে ১৪.১ শতাংশ বৃদ্ধি দেখিয়েছে। অন্যদিকে, কোচ ও কেট স্পেড ব্র্যান্ডের মালিকানা স্বত্বাধিকারী কোম্পানি, ট্যাপেস্ট্রিও ভালো মুনাফা করেছে, যার ফলে এর শেয়ারের দাম ৩.৭ শতাংশ বেড়েছে।
তবে, কিছু কোম্পানির জন্য পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল। ডোনাট প্রস্তুতকারক কোম্পানি ক্রিস্পি ক্রিমে তাদের পূর্বাভাস প্রত্যাহার করে নেওয়ায় শেয়ারের দাম ২৪.৭ শতাংশ কমে গেছে।
এছাড়া, মলসন কুর্স-এর মতো কিছু কোম্পানির মুনাফা প্রত্যাশা অনুযায়ী না হওয়ায় তাদের শেয়ারের দরও কমেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এখনো স্থিতিশীল দেখা যাচ্ছে, তবে শুল্কের কারণে মার্কিন পরিবারগুলোর মধ্যে হতাশা বাড়ছে এবং মন্দা আসার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের সুবিধা পাওয়ার জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তবে কর্মীদের উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়ায় অর্থনীতিবিদরা চিন্তিত।
শুক্রবার সকালে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে।
নিউইয়র্ক মারকান্টাইল এক্সচেঞ্জে (New York Mercantile Exchange) প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ২৬ সেন্ট বেড়ে $60.17 ডলারে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুড ২৯ সেন্ট বেড়ে $63.13 ডলারে কেনাবেচা হচ্ছে।
ডলারের বিপরীতে জাপানি ইয়েনের দর কমেছে। এছাড়া, ইউরোর দামও বেড়েছে।
এই বাজারের অস্থিরতা বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতি এবং বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তন বাংলাদেশের রপ্তানি খাত, বৈদেশিক রেমিটেন্স এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস