চীন কি সামরিক প্রযুক্তির পরীক্ষা চালাচ্ছে? ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা, চীনের অস্ত্রের পরীক্ষা?
দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা আবারও বাড়ছে। কাশ্মীর সীমান্তে সহিংসতার মধ্যে, এবার আলোচনায় এসেছে চীন নির্মিত অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জামের কার্যকারিতা।
সম্প্রতি পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে তারা চীন থেকে কেনা জে-১০সি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। যদিও ভারত সরকার এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এই পরিস্থিতিতে, চীন এবং পশ্চিমা বিশ্বের সামরিক সরঞ্জামের মধ্যেকার পার্থক্য নতুন করে সামনে এসেছে।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে বিবাদ বহু পুরনো। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকে এই অঞ্চল নিয়ে তিনবার যুদ্ধ হয়েছে।
বর্তমানে, চীনের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই অঞ্চলে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বেইজিং দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের ‘ঘনিষ্ঠ মিত্র’। চীন পাকিস্তানকে অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করে আসছে, যা এই অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলছে।
সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী হিসেবে চীনের উত্থান একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই)-এর তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে পাকিস্তান তাদের আমদানি করা অস্ত্রের প্রায় ৮১ শতাংশ চীন থেকে সংগ্রহ করেছে।
এর মধ্যে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, রাডার এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য। বিশ্লেষকদের মতে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যেকোনো সামরিক সংঘাতে এসব সরঞ্জামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যেকার সামরিক সংঘাত কার্যত চীনের সামরিক সরঞ্জামের পরীক্ষাস্থল হিসেবে কাজ করতে পারে। এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবের বিপরীতে, একটি নতুন ভূ-রাজনৈতিক মেরুকরণ সৃষ্টি করছে।
ঐতিহাসিকভাবে, সোভিয়েত ইউনিয়ন কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতকে সমর্থন জুগিয়েছিল, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পাকিস্তানের পাশে ছিল। বর্তমানে, ভারত ক্রমশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকছে এবং পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনছে।
অন্যদিকে, পাকিস্তান চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করেছে।
পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে চীনের এই সহায়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীন পাকিস্তানকে জে-১০সি-এর মতো অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান সরবরাহ করেছে।
এই বিমানের উন্নত প্রযুক্তি এবং ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সামরিক শক্তিকে আরও শক্তিশালী করেছে। অন্যদিকে, ভারতের সামরিক সরঞ্জামের একটা বড় অংশ আসে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে।
যদি পাকিস্তানের দাবির সত্যতা প্রমাণিত হয়, তবে এটি চীনের সামরিক সরঞ্জামের সক্ষমতা এবং পশ্চিমা প্রযুক্তির বিরুদ্ধে তাদের সাফল্যের প্রমাণ হিসেবে দেখা হবে। এমন পরিস্থিতিতে চীনের অস্ত্র রফতানির বাজারে আরও বেশি আগ্রহ তৈরি হতে পারে।
তবে, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ভারতের ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়তো ভারতীয় বিমান বাহিনীর কৌশলগত দুর্বলতাও হতে পারে। এছাড়াও, যুদ্ধকালীন নিয়মকানুন এবং গোয়েন্দা তথ্যের অভাবও এর কারণ হতে পারে।
বর্তমানে, এই অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি বেশ জটিল। দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমার কোনো লক্ষণ নেই।
এই পরিস্থিতিতে, চীনের সামরিক সরঞ্জামের কার্যকারিতা এবং এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণ নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন