ভ্যাটিকানের আর্থিক সংকট: পোপ লিওর কাঁধে বিশাল দায়িত্ব। নতুন পোপ চতুর্দশ লিও নির্বাচিত হওয়ার পরেই ভ্যাটিকানের (Vatican) অর্থ বিষয়ক জটিলতাগুলো নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
ক্যাথলিক চার্চের প্রধান কার্যালয়টিতে দীর্ঘদিন ধরেই আর্থিক ব্যবস্থাপনায় নানা ধরনের সমস্যা বিদ্যমান। একদিকে যেমন বাড়ছে পরিচালনা খরচ, তেমনি পেনশন ফান্ডে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের ঘাটতি।
এছাড়াও, অতীতে হওয়া কিছু আর্থিক কেলেঙ্কারিও বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০২২ সালে ভ্যাটিকানের রাজস্ব ছিল প্রায় ৭৭ কোটি ইউরো, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় হিসাব করলে দাঁড়ায় প্রায় ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকার মতো।
এই সময়ে তাদের পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় প্রায় ৮ কোটি ৩০ লক্ষ ইউরোর (৯৫০ কোটি টাকার বেশি) ঘাটতি দেখা দেয়। এছাড়া, ভ্যাটিকানের পেনশন ফান্ডে প্রায় ৬৩ কোটি ১০ লক্ষ ইউরোর (৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি) ঘাটতি রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে নতুন পোপ কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দেন, এখন সেটাই দেখার বিষয়। আর্থিক সংকটের মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্রমবর্ধমান পরিচালনা খরচ, বেতন ও নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি।
এছাড়াও, চার্চের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা করতে গিয়েও হিমশিম খেতে হচ্ছে। অতীতে অনেক পেনশন ফান্ড হিসাব মেলানোর ক্ষেত্রে ভুল করায় এমনটা হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, ইতালিতে যেখানে ১৯৬০ সালে গড় আয়ু ছিল ৬৯ বছর, সেখানে ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৩ বছর। ফলে, অনেক ফান্ড তাদের কর্মীদের অবসরকালীন সুবিধা দিতে গিয়ে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করতে পারছে না।
আর্থিক সংকট মোকাবিলায় এর আগের পোপ ফ্রান্সিস বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেন এবং ভ্যাটিকান ব্যাংকের স্বচ্ছতা আনতে চেষ্টা করেন।
যদিও তিনি পুরোপুরিভাবে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এর আগে, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে লন্ডনে একটি বিলাসবহুল সম্পত্তি কিনতে গিয়ে প্রায় ১৪ কোটি ইউরো (১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি) লোকসান দেয় ভ্যাটিকান।
এমনকি, ১৯৮২ সালে ইতালির একটি ব্যাংকের দেউলিয়া হওয়ার কারণেও প্রায় ২৫ কোটি ডলার (২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি) ক্ষতির শিকার হয়েছিল তারা। বিশ্লেষকদের মতে, নতুন পোপ চতুর্দশ লিওকে এখন এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।
সম্ভবত তিনি ভ্যাটিকানের কূটনৈতিক সম্পর্কগুলো পুনর্বিবেচনা করতে পারেন, যা ব্যয়ের একটি বড় অংশ। তবে, তিনি তার পূর্বসূরির মতো সংস্কারের পথে কতটা আগ্রহী হন এবং কিভাবে আর্থিক হিসাব মেলান, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা