গাজায় ত্রাণ বিতরণে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ, বাড়ছে বিতর্ক!

গাজায় ত্রাণ বিতরণের দায়িত্বে আসতে পারে যুক্তরাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত একটি নতুন সংস্থা। ইসরায়েলের অবরোধের মধ্যে সেখানকার মানবিক সংকট আরও গভীর হচ্ছে, আর এই পরিস্থিতিতে সাহায্য বিতরণের ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, এই নতুন ব্যবস্থার মাধ্যমে জাতিসংঘের (UN) মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গাজায় মানবিক সহায়তা কার্যক্রম সমন্বয় করতে একটি নতুন ফাউন্ডেশন তৈরি করা হচ্ছে। এই ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (GHF) নামে পরিচিত সংস্থাটির নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব ইসরায়েলের, এমনটাই জানিয়েছেন ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি।

তবে, গাজায় ত্রাণ বিতরণের সঙ্গে ইসরায়েল সরাসরি যুক্ত থাকবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বৃহস্পতিবার এই পরিকল্পনার কথা জানান। যদিও বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি, ধারণা করা হচ্ছে, হামাস এবং অন্যান্য গোষ্ঠীর হাতে ত্রাণ বিতরণের নিয়ন্ত্রণ যাতে না থাকে, সেই কারণেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এই পদক্ষেপ নিতে চাইছে।

সংবাদ সংস্থা এপি’র খবর অনুযায়ী, নতুন গঠিত GHF একটি প্রস্তাব তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের বর্তমান পদ্ধতি পরিবর্তন করার কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে এই কাজটি করে থাকে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো।

প্রস্তাব অনুযায়ী, ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ করার স্থানগুলোতে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য বেসরকারি ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে।

গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দেয়, যার ফলে সেখানকার মানবিক পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।

ইসরায়েল জানিয়েছে, ত্রাণ বিতরণের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত তারা অবরোধ শিথিল করবে না। তাদের অভিযোগ, ত্রাণ সরবরাহের মাধ্যমে হামাসকে সহায়তা করা হয়।

জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে বিভিন্ন মানবিক সংস্থা। GHF-এর প্রস্তাব তাদের উদ্বেগ কমাতে পারবে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

ব্রুস খুব শীঘ্রই এই বিষয়ে আরও ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংবাদ মাধ্যম ‘অ্যাক্সিস’-এর সূত্র অনুযায়ী, GHF-এর প্রধান হিসেবে কাজ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছেন জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সাবেক নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলি।

গাজায় বসবাসকারী ২৩ লক্ষ ফিলিস্তিনির জীবনযাত্রা ইসরায়েলের অবরোধের কারণে বিপর্যস্ত। এদের মধ্যে অনেকেই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

খাদ্য, জ্বালানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটে দিন কাটাচ্ছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিকল্পনা অনেকটা ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা কর্তৃক অনুমোদিত একটি প্রস্তাবের মতোই।

প্রস্তাব অনুযায়ী, চারটি ‘নিরাপদ বিতরণ কেন্দ্র’ তৈরি করা হবে, যেখানে প্রত্যেকটিতে তিন লক্ষ মানুষের জন্য ত্রাণ সরবরাহ করা হবে। গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে বিতাড়িত ফিলিস্তিনিদের এই কেন্দ্রগুলোতে যেতে বাধ্য করা হবে।

জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সাহায্য সংস্থা এই পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনা করেছে। তাদের মতে, ত্রাণ সংগ্রহের সময় ফিলিস্তিনিরা প্রায়ই ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার শিকার হন।

মাইক হাকাবি শুক্রবার বলেন, “সবচেয়ে বড় বিপদ হলো কিছু না করা এবং মানুষগুলো অনাহারে মারা যাওয়া।” তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, ত্রাণ “কার্যকরভাবে বিতরণ করা হবে, তবে তা নিরাপদও হতে হবে।”

ইসরায়েলের প্রায়-পুরোপুরি অবরোধের কারণে গত তিন মাস ধরে গাজায় জরুরি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোকে এড়িয়ে যাওয়ার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ইতিমধ্যে গাজায় অন্তত ৫৭ জন ফিলিস্তিনি অনাহারে মারা গেছেন, যাদের অধিকাংশই শিশু, অসুস্থ এবং বয়স্ক।

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সংস্থার মুখপাত্র জেনস লেরকে গত মঙ্গলবার বিদ্যমান ত্রাণ কাঠামো ভেঙে দেওয়ার এই প্রচেষ্টার নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, “এটা সম্ভবত ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রাণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা। সাহায্য সম্পূর্ণরূপে মানবিক চাহিদার উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত।”

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *