যুদ্ধবিরতি না মানলে পুতিনের উপর নিষেধাজ্ঞার খড়া, কড়া হুঁশিয়ারি!

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি না হলে রাশিয়ার উপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপর চাপ বাড়াতে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রতি “শর্তহীন যুদ্ধবিরতি” ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে মস্কো বারবার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। জানা গেছে, শনিবার ইউক্রেনের মিত্র দেশগুলোর নেতাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক কিয়েভে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে, যা রাশিয়ার উপর ক্রমবর্ধমান চাপের একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত।

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে ট্রাম্প তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আলোচনার টেবিলে আনতে চেষ্টা করছেন। ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ চারবার রাশিয়ায় গিয়ে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এছাড়াও, ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে।

তবে, রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি সীমিত সময়ের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, ট্রাম্প পুতিনের এই ধীর গতিতে হতাশ হয়ে পড়ছেন। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানেও পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, যা আগে কিছুটা নরম ছিল।

সম্প্রতি, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, যদি কোনো অগ্রগতি না হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসবে। এখন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের অন্যান্য পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে মিলে রাশিয়ার উপর আরও চাপ সৃষ্টি করছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শুক্রবার ইঙ্গিত দিয়েছেন, শনিবারের মধ্যেই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের বিস্তারিত ঘোষণা আসতে পারে। তিনি জানান, “কোয়ালিশন অফ দ্য উইলিং”-এর সদস্য দেশগুলোর নেতারা কিয়েভে মিলিত হবেন। তবে, এই শীর্ষ সম্মেলনে কারা যোগ দেবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।

বৃহস্পতিবার ট্রাম্প জেলেনস্কি এবং বেশ কয়েকজন ইউরোপীয় নেতার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব এবং নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কথা বলেছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, তিনি বৃহস্পতিবার ট্রাম্পের সঙ্গে “কয়েকবার” কথা বলেছেন এবং “শর্তহীন ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য তার জোরালো আহ্বানের” প্রশংসা করেছেন।

ম্যাক্রোঁ আরও বলেন, রাশিয়া যদি এই প্রস্তাব গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়, তবে ফ্রান্স “ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে দৃঢ়ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত”। শুক্রবার পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কের সঙ্গে কথা বলার সময় ম্যাক্রোঁ নিশ্চিত করেছেন, শনিবার কিয়েভে “আংশিকভাবে ভার্চুয়ালি এবং আংশিকভাবে সরাসরি” একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

বৃহস্পতিবার ট্রাম্প নর্ডিক দেশগুলোর নিরাপত্তা জোট “জয়েন্ট এক্সপেডিশনারি ফোর্স” (জেএফ)-এর নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের নেতারা ওসলোতে এক শীর্ষ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জেলেনস্কিকে ফোন করেন।

সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমরা উভয় প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছি যে আমরা ইউক্রেনে একটি ন্যায়সঙ্গত এবং স্থায়ী শান্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি এবং শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতি ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের অবিচল সমর্থন অব্যাহত থাকবে।”

শুক্রবার যখন পুতিন মস্কোতে একটি সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নিতে বন্ধুভাবাপন্ন বিশ্ব নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তখন ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানাতে দেশটির ইউরোপীয় মিত্ররা কিয়েভে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠায়।

যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সমর্থন এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের অপরাধের তদন্তের জন্য একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়ে আলোচনার জন্য শুক্রবার ইউক্রেনের পশ্চিমা শহর লিভিভে বেশ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধি দল মিলিত হয়। বৈঠকে ইইউ-এর পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কজা কাল্লাস, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি, জার্মানির নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ওয়াডেফুল, ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল বারো এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর শীর্ষ কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *