মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা শুরুর প্রাক্কালে কে প্রথম আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে, তা নিয়ে চলছে বাগ্যুদ্ধ। সুইজারল্যান্ডে আসন্ন বৈঠকে শুল্ক কমানোর বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও, দুই পরাশক্তির এই দ্বন্দ্বে বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাব নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ।
বাণিজ্য নিয়ে এমন টানাপোড়েন সাধারণত বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ভালো খবর নয়, কারণ এর সরাসরি প্রভাব পড়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বুধবার জানান, বৈঠকের অনুরোধটি এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। অন্যদিকে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন।
তিনি ডেভিড পেরডুকে চীনের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে শপথ গ্রহণ করানোর সময় বলেন, “তারা বলছে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি? আমার মনে হয় তাদের ফাইলগুলো আবার দেখা উচিত।” এমনকী, ট্রাম্পের দাবি ছিল, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাকে ফোন করেছিলেন, যদিও চীন তা অস্বীকার করেছে।
আসলে, বিশ্বের বৃহত্তম এই দুটি অর্থনীতির মধ্যেকার এই আলোচনা শুধু কথার কথা নয়। এর পিছনে লুকিয়ে আছে ক্ষমতা প্রদর্শনের লড়াই। ওয়াশিংটন চাইছে, বেইজিং আলোচনা শুরু করেছে—এমনটা প্রমাণ করতে, যা তাদের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করবে।
অন্যদিকে, বেইজিং চাইছে আলোচনার প্রস্তাব তারাই দিয়েছে—এই বিষয়টি এড়িয়ে যেতে, যাতে অভ্যন্তরীণভাবে তাদের দুর্বল মনে না করা হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আলোচনার প্রস্তাব কে দিয়েছে, সেই বিষয়ে দুই পক্ষের এই মতবিরোধ আসলে কূটনৈতিক চাপ তৈরির কৌশল। সাবেক মার্কিন কূটনীতিক ড্যানিয়েল রাসেল এই ঘটনাকে ‘কূটনৈতিক অচলাবস্থা এবং ক্ষমতার প্রদর্শন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি আরও জানান, চীনের কোনো শীর্ষ নেতা এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন, এমনটা তাঁর জানা নেই।
শুল্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বেশ কঠোর ছিল। তাদের বক্তব্য ছিল, ‘শি জিনপিং যদি শুল্ক কমাতে চান, তাহলে তিনি জানেন কীভাবে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।’ ট্রাম্প যখন চীনা পণ্যের উপর ১৪৫ শতাংশ এবং চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধি করেন, তখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়।
এরপর ট্রাম্পের ইঙ্গিত ছিল, চীনের কর্মকর্তারা তাঁর সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করছেন।
তবে চীন দ্রুত সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন এক বিবৃতিতে বিষয়টিকে ‘ভুয়া খবর’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
এমনকি, যুক্তরাষ্ট্রকে শুল্ক আলোচনা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করা বন্ধ করতেও বলেন তিনি।
পরে, টাইম ম্যাগাজিনের একটি সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প দাবি করেন, শি জিনপিং তাকে ফোন করেছিলেন। যদিও এর বিস্তারিত তিনি জানাননি।
চীনের পক্ষ থেকে দ্রুত সেই দাবিও অস্বীকার করা হয়। তবে এরপর চীনের সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেইজিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি প্রচার হতে থাকে এবং পরবর্তীতে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও তা নিশ্চিত করে।
বাস্তবতা হলো, উভয় সরকারই নিয়মিত যোগাযোগের মধ্যে ছিল এবং কে ‘আলোচনার প্রস্তাব’ দিয়েছে, সেই বিষয়ে তাদের নিজস্ব ধারণা থাকতে পারে। সম্ভবত, উভয় পক্ষই তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সঠিক।
অবশেষে, ট্রাম্প আলোচনার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিতে রাজি নন বলেই মনে হচ্ছে। সুইজারল্যান্ডে আসন্ন বাণিজ্য আলোচনার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “প্রথম ফোন কে করেছিল বা করেনি, সেটা কোনো বিষয় নয়। আসল বিষয় হলো, সেই আলোচনা কক্ষে কী ঘটে।”
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। কারণ, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিরোধের সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পড়তে পারে।
বিশেষ করে, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বেড়ে গেলে, তা দেশের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যকে প্রভাবিত করে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস