শিরোনাম: ফিলিস্তিনপন্থী প্রচারের অভিযোগে আটকের পর মুক্তি, তুফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর পাশে আদালত
ঢাকা, [তারিখ] – ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানানোয় যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন সংস্থা (ICE) কর্তৃক আটক হওয়া তুফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পিএইচডি শিক্ষার্থী রুমেসা ওজতুর্কের মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্ট অঙ্গরাজ্যের জেলা জজ উইলিয়াম সেশনস এই রায় দেন।
আদালতের রায়ে বলা হয়, রুমেসা ওজতুর্কের আটকাদেশ বহাল রাখা যায় না। বিচারক তার রায়ে উল্লেখ করেন, “আদালত মনে করে তিনি সমাজের জন্য বিপজ্জনক নন এবং তার পালিয়ে যাওয়ারও কোনো ঝুঁকি নেই।
তাই, আদালত সরকারপক্ষকে অবিলম্বে রুমেসা ওজতুর্কের মুক্তির নির্দেশ দিচ্ছেন।
রুমেসা ওজতুর্ক একজন তুর্কি নাগরিক, যিনি শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। তার আইনজীবীরা যুক্তি দেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ বাকস্বাধীনতা এবং যথাযথ বিচার প্রক্রিয়াসহ তার সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করেছে।
বিচারক সেশনস আইনজীবীদের যুক্তির সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, “ওজতুর্কের আটকাদেশ বহাল থাকলে এই দেশের কোটি কোটি মানুষের বাকস্বাধীনতা খর্ব হবে, যারা নাগরিক নন।
আদালতের এই রায়ে রুমেসার আইনজীবী মাহসা খানবাবাই স্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, “নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলা কি এখন অপরাধ? গণহত্যার বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য কি এখন কারাগারে যেতে হয়?”
আদালতে শুনানির সময়, ৩৫ বছর বয়সী রুমেসা লুইসিয়ানার একটি ডিটেনশন সেন্টার থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন।
তার পরনে ছিল কমলা রঙের পোশাক এবং হিজাব। তিনি জানান, গত ২৫শে মার্চে সোমারভিলে, ম্যাসাচুসেটস-এ তার ছাত্রাবাসের কাছে সাদা পোশাকের ICE এজেন্টরা তাকে ঘিরে ধরেছিল।
সেই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা হয়।
আটকের পর লুইসিয়ানায় স্থানান্তরের সময় রুমেসা মোট ১২ বার শ্বাসকষ্টে ভুগেছিলেন।
আটলান্টার বিমানবন্দরে প্রথমবার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তার প্রয়োজনীয় ওষুধও ছিল না। তিনি বিচারকের কাছে বলেন, “আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম এবং কাঁদছিলাম।”
পিএইচডি শিক্ষার্থী রুমেসা জানান, তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার শিশুদের নিয়ে গবেষণা করছিলেন।
তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে একজন, যাদেরকে ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলার কারণে ট্রাম্প প্রশাসন টার্গেট করেছিল।
প্রশাসন ১৯৫২ সালের একটি বিতর্কিত অভিবাসন আইনের আশ্রয় নেয়, যা পররাষ্ট্রনীতির স্বার্থে ক্ষতিকর বিবেচিত হলে কাউকে বিতাড়িত করার অনুমতি দেয়।
প্রশাসন ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ এবং অন্যান্য সমর্থনকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করেছে, যদিও তাদের কাছে পর্যাপ্ত প্রমাণ ছিল না।
তবে রুমেসার বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, কারণ তিনি তেমন পরিচিত মুখ নন।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পত্রিকায় সহপাঠীদের সঙ্গে মিলে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের প্রতি ফিলিস্তিনি গণহত্যার স্বীকৃতি এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোম্পানিগুলো থেকে বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছিল।
শুক্রবার শুনানিতে রুমেসা জানান, মুক্তি পেলে তুফ্টস বিশ্ববিদ্যালয় তাকে থাকার ব্যবস্থা করবে এবং তার বন্ধু ও আইনজীবীরা পরবর্তী শুনানিতে তাকে আদালতে নিয়ে যাবেন।
তিনি পিএইচডি ডিগ্রি শেষ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলেও জানান।
উল্লেখ্য, এর এক সপ্তাহ আগে, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের নেতা মোহসেন মাহদাওয়ীকেও ভার্মন্টের একটি আদালত অভিবাসন হেফাজত থেকে মুক্তি দেয়।
আদালতের রায়ের পর হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, “নিম্ন আদালতের বিচারকদের যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করার কোনো অধিকার নেই।”
তিনি আরও যোগ করেন, “ভিসা নিয়ে এই দেশে আসাটা একটি সুযোগ, কোনো অধিকার নয়।”
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা