পেন্টাগনের নির্দেশে সামরিক একাডেমিতে বই সরিয়ে ফেলার তোড়জোড়

মার্কিন সামরিক অ্যাকাডেমিগুলোতে পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা ও অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে পেন্টাগন। সম্প্রতি পাওয়া একটি স্মারকলিপিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। জাতিগত পরিচয়, লিঙ্গ বিষয়ক ধারণা এবং অন্যান্য ‘বিভাজন সৃষ্টিকারী বিষয়’ নিয়ে লেখা বইগুলো সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা কর্তৃপক্ষের মতে প্রতিরক্ষা বিভাগের মূল লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

সামরিক একাডেমির পাঠাগারগুলো থেকে বই চিহ্নিত করে সরিয়ে ফেলার জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠনের ঘোষণাও রয়েছে স্মারকলিপিতে। প্রতিরক্ষা বিভাগের বিভিন্ন স্তরের বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ এবং লাইব্রেরিয়ানদের সমন্বয়ে এই কমিটি গঠিত হয়েছে। আগামী ২১ মের মধ্যে বইগুলো চিহ্নিত করে তালিকাভুক্ত করতে বলা হয়েছে।

কমিটি এরই মধ্যে বইগুলো খুঁজে বের করার জন্য কিছু অনুসন্ধানী শব্দ তৈরি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে: ‘ইতিবাচক কর্মসংস্থান’, ‘বর্ণবাদ বিরোধী’, ‘মিত্রতা’, ‘কর্মক্ষেত্রে বৈচিত্র্য’, ‘লিঙ্গ পরিবর্তন’, ‘শ্বেতাঙ্গ সুবিধা’ এবং ‘সমালোচনামূলক বর্ণবাদ তত্ত্ব’।

পেন্টাগনের এই পদক্ষেপ মূলত সামরিক বাহিনীতে ‘বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি’ (Diversity, Equity, and Inclusion – DEI) বিষয়ক বিষয়বস্তু কমানোর বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ।

ইতিমধ্যে, নৌ অ্যাকাডেমি তাদের প্রধান লাইব্রেরি থেকে প্রায় চারশ’ বই সরিয়ে ফেলেছে। এছাড়া, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি নির্বাহী আদেশের কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যেখানে কে-১২ স্কুলগুলো থেকে ‘বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি’ বিষয়ক সব বিষয়বস্তু সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

নৌ অ্যাকাডেমি লেখক রায়ান হলিডেকেও একটি বক্তৃতা দেওয়ার আমন্ত্রণ বাতিল করতে বাধ্য হয়, কারণ তিনি তার উপস্থাপনা থেকে অ্যাকাডেমির বই সরানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে কিছু স্লাইড সরাতে রাজি হননি।

ওয়েস্ট পয়েন্টের একজন অধ্যাপক, যিনি ১৩ বছর ধরে সেখানে দর্শন শাস্ত্র পড়াতেন, নিউইয়র্ক টাইমসে লেখা এক নিবন্ধে পদত্যাগ করেছেন। তিনি জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের ‘আদর্শিক রুচি’ অনুযায়ী পাঠ্যক্রম পরিবর্তন, সিলেবাস সংশোধন এবং বিতর্কিত বিষয়গুলো সেন্সর করার কারণে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

অধ্যাপক গ্রাহাম পার্সনস-এর মতে, ওয়েস্ট পয়েন্ট কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে ‘ব্যাপকভাবে’ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পালন করছে এবং এর ফলে শিক্ষাক্রম ও শিক্ষকদের গবেষণায় ‘ব্যাপক আঘাত’ করা হচ্ছে।

অধ্যাপক পার্সনসের এই মতামতের প্রতিক্রিয়ায়, পেন্টাগনের মুখপাত্র এক্সে (সাবেক টুইটার) লেখেন, ‘আপনাকে মিস করা হবে না অধ্যাপক পার্সনস’।

গত মাসে ছাত্র এবং অভিভাবকদের কাছ থেকে জানা যায়, প্রতিরক্ষা বিভাগের স্কুলগুলোতেও এই নীতি সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। এপি সাইকোলজি (AP Psychology) এবং কিছু ছাত্র ক্লাব ও পাঠ্যবই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ নিয়ে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (American Civil Liberties Union – ACLU) প্রতিরক্ষা বিভাগের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

হলোকস্ট, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলা, ক্যান্সার সচেতনতা, যৌন নিপীড়ন এবং আত্মহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক বিভিন্ন নিবন্ধও পেন্টাগনের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে অথবা সরানোর জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে।

লাইব্রেরি কমিটি গঠনের স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, বই অপসারণের বিষয়টি ‘সতর্কতার সঙ্গে’ পরিচালনা করা হবে এবং শিক্ষা ও প্রতিরক্ষা বিভাগের মিশন সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরাই এই কাজটি করবেন।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *