মার্কিন ঋণ সংকট: দেউলিয়াত্বের ঝুঁকিতে দেশ, এখনই ব্যবস্থা?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ পরিশোধের সীমা (Debt Ceiling) বাড়ানো বা স্থগিত করা না হলে, বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগতে পারে। এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট সতর্ক করে বলেছেন, আগস্ট মাসের মধ্যে যদি এই সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ঋণ পরিশোধে খেলাপি (Default) হতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রবাসী আয় এবং বিদেশি বিনিয়োগে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।

**ঋণ সংকট কী এবং কেন?**

যুক্তরাষ্ট্রের সরকার তাদের বিল পরিশোধের জন্য ঋণের উপর নির্ভরশীল। এই ঋণ নেওয়ার একটি সীমা নির্ধারণ করা আছে, যা ‘debt ceiling’ নামে পরিচিত।

বর্তমানে এই সীমা প্রায় ৩৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই সীমা অতিক্রম করার পরে, সরকার নতুন করে ঋণ নিতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে, যদি কংগ্রেস এই সীমা বাড়াতে বা স্থগিত করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তার দেনা পরিশোধে সমস্যায় পড়বে।

এর ফলস্বরূপ, বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।

**বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রভাব**

যুক্তরাষ্ট্র খেলাপি হলে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিভিন্নভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

* **রপ্তানি হ্রাস:** যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সহযোগী। দেশটির অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্যের চাহিদা কমে যেতে পারে, যা রপ্তানি আয়ে প্রভাব ফেলবে।

* **প্রবাসী আয় কমে যাওয়া:** মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা, যারা যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে কাজ করেন, তাদের আয় কমে যেতে পারে। এর ফলে, দেশে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণও হ্রাস পেতে পারে।

* **বৈদেশিক বিনিয়োগে প্রভাব:** বিশ্ব অর্থনীতির দুর্বলতার কারণে, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যেতে পারে। বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের ঝুঁকি কমাতে পারে, যা দেশের উন্নয়ন প্রকল্পে বাধা সৃষ্টি করবে।

* **আমদানি খরচ বৃদ্ধি:** বিশ্ববাজারে মার্কিন ডলারের মূল্য কমে গেলে, বাংলাদেশের আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে, খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেলে, তা দেশের বাজারে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়িয়ে দেবে।

**সম্ভাব্য সমাধান এবং জটিলতা**

মার্কিন কংগ্রেসে রিপাবলিকান পার্টির সদস্যরা এই ঋণসীমা বাড়ানো নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত। তারা বাজেট সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনতে চাইছে, যার কারণে বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

ট্রেজারি সেক্রেটারি বেসেন্ট কংগ্রেসকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান করা না গেলে, আগস্ট মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সংকট তৈরি হতে পারে।

**যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট**

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের ঋণ গ্রহণের ক্ষমতা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রিপাবলিকান পার্টি বর্তমানে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ করছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে, দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনেও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য রিপাবলিকানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

**উপসংহার**

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ সংকট একটি জটিল সমস্যা, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ।

এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও।

তাই, এই সংকট মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

বিশ্ব অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতি বিবেচনা করে, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের এখনই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত, যাতে সম্ভাব্য খারাপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যায় এবং দেশের অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রাখা যায়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *