শিরোনাম: ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি: সম্ভাব্য পারমাণবিক হুমকির আশঙ্কায় বাংলাদেশ
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করেছে, যা বাংলাদেশের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে বিদ্যমান কাশ্মীর সমস্যাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক চলছে দীর্ঘদিন ধরে।
এর মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও ড্রোন ব্যবহারের অভিযোগ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এমন পরিস্থিতিতে, উভয় দেশের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের নাগরিকদেরও উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
কাশ্মীর সীমান্তে উত্তেজনা নতুন করে বেড়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হলো গত ২২শে এপ্রিলের একটি ঘটনা। যেখানে ভারতীয়-শাসিত কাশ্মীরে একটি সশস্ত্র হামলায় ২৫ জন পর্যটক ও একজন স্থানীয় গাইড নিহত হন।
ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে, যদিও পাকিস্তান তা অস্বীকার করে। এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ শুরু হয়, যা কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি থেকে সামরিক সংঘাতের দিকে মোড় নেয়।
উভয় দেশই সীমান্তে গোলাবর্ষণ ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। ৭ই মে তারিখে ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যাতে অন্তত ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
এরপর ৮ই মে তারিখে ভারতের আকাশে পাকিস্তানের ড্রোন ওড়ার ঘটনা ঘটে। পাল্টা জবাবে ভারতও একই কাজ করে। ১০ই মে তারিখে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা ভারতের কয়েকটি ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। যদিও ভারতের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ভারত ও পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার নিয়ে আলোচনা করা হলে, এর ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ১৯৭৪ সালে ভারত প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় এবং ১৯৯৮ সালে আরও কয়েকটি পরীক্ষার পর নিজেদেরকে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে।
এর কয়েক দিনের মধ্যেই পাকিস্তানও পাল্টা পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়ে নিজেদের পারমাণবিক ক্ষমতা প্রদর্শন করে। বর্তমানে, ভারতের কাছে ১৮০টির বেশি এবং পাকিস্তানের কাছে ১৭০টির বেশি পারমাণবিক বোমা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
উভয় দেশই ক্রমাগত তাদের অস্ত্রভাণ্ডার বৃদ্ধি করছে, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি।
উভয় দেশের পারমাণবিক নীতিও উদ্বেগের কারণ। ভারতের নীতি হলো ‘আগে ব্যবহার নয়’ (No First Use)। অর্থাৎ, আগে তারা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে না।
তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোনো কোনো ভারতীয় রাজনীতিবিদ এই নীতিতে পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত দিয়েছেন। অন্যদিকে, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে ‘আগে ব্যবহার নয়’ নীতি ঘোষণা করা হয়নি। বরং, তারা বিভিন্ন সময় জানিয়েছে যে, তাদের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভবনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উভয় দেশের মধ্যে যদি কোনো যুদ্ধ বাঁধে, তাহলে তা শুধু দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এর প্রভাব পড়বে পুরো অঞ্চলে, বিশেষ করে বাংলাদেশের উপর।
বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ এবং জনগণের জীবনে এর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে যেকোনো ধরনের সংঘাত বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ। কারণ, এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য, সীমান্ত নিরাপত্তা এবং উদ্বাস্তু সমস্যাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হতে পারে।
বর্তমানে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে এবং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে উভয় দেশকে উৎসাহিত করছে। বাংলাদেশের উচিত, এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন করা।
একই সঙ্গে, দেশের নিরাপত্তা ও স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা