ভোটের ডামাডোল: দক্ষিণ কোরিয়ায় রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর পরিবর্তন!

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী বদল নিয়ে বিতর্ক।

সিউল, দক্ষিণ কোরিয়া – আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিতে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। ক্ষমতাসীন পিপল পাওয়ার পার্টি (People Power Party – PPP) তাদের মনোনীত প্রার্থী কিম মুন সু’কে (Kim Moon Soo) পরিবর্তন করে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সুকে (Han Duck-soo) প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে।

এই সিদ্ধান্তটি নির্বাচনের মাত্র এক সপ্তাহ আগে নেওয়া হয়েছে, যা দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন।

ডিসেম্বরে সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের (Yoon Suk Yeol) অভিশংসন এবং ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকে দলটির মধ্যে বিভেদ দেখা দেয়, যার ফলস্বরূপ এই পরিবর্তন। কিম মুন সু’কে দলের প্রাথমিক নির্বাচনে জয়ী ঘোষণার এক সপ্তাহের মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত আসে।

দলের মধ্যে এই ধরনের দ্রুত প্রার্থী পরিবর্তনের ঘটনাকে অনেকে ‘রাজনৈতিক অভ্যুত্থান’ হিসেবেও অভিহিত করছেন।

কিম মুন সু ছিলেন ইউন সুক-ইওলের অনুগত এবং সাবেক শ্রমমন্ত্রী। তিনি গত ৩ মে দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সংস্কারপন্থী একজন নেতা যিনি ইউন-এর সামরিক আইন জারির সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিলেন।

কিন্তু দলের শীর্ষ নেতৃত্ব, যাদের মধ্যে অধিকাংশই ইউন-এর সমর্থক, তারা কিমকে সরে দাঁড়াতে এবং হানকে সমর্থন করার জন্য চাপ দিতে থাকে। তাদের মতে, উদারপন্থী ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী লি জায়ে-মিয়ংয়ের (Lee Jae-myung) বিরুদ্ধে হান-এর জয়ের সম্ভাবনা বেশি।

হান ডাক-সু এর আগে ইউন-এর অভিশংসনের পর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি গত ২ মে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার উদ্দেশ্যে পদত্যাগ করেন।

তিনি দীর্ঘদিন ধরে সরকারি দায়িত্বে ছিলেন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তার অভিজ্ঞতা রয়েছে উল্লেখ করে এই পদে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

হান এবং কিমের মধ্যে ঐক্যের আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর, পিপল পাওয়ার পার্টির জরুরি কমিটি শনিবার ভোরে কিমের মনোনয়ন বাতিল করে। এরপর হানকে দলের নতুন প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

যদিও এই পরিবর্তন এখনো নিশ্চিত হতে শনিবার দলীয় ভোটাভুটি এবং রবিবার জাতীয় কমিটির অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের নাম জমা দেওয়ার শেষ তারিখও রবিবার।

অন্যদিকে, কিম মুন সু এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘দলের মধ্যে গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়েছে।’ তিনি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

তবে দলীয় সমর্থন ছাড়া তার প্রার্থিতা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলবে। বর্তমানে জনমত জরিপে লি জায়ে-মিয়ংয়ের জনপ্রিয়তা বেশি দেখা যাচ্ছে।

তিনি দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার। তবে সমালোচকরা মনে করেন, তার নেতৃত্ব দেশকে আরও বিভক্ত করতে পারে। এমনকি তার বিরুদ্ধে বর্তমানে পাঁচটি দুর্নীতি মামলা চলছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার এই রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশটির অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, যা বাংলাদেশের জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *