নতুন পোপ: আমাজনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশায় বুক বাঁধছে ক্যাথলিক বিশ্ব!

আমাযনের অরণ্য রক্ষায় নতুন পোপের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব, বিশেষ করে সেখানকার ক্যাথলিক সম্প্রদায়। নতুন পোপ, যিনি পূর্বে বিশপ রবার্ট প্রিভোস্ট ছিলেন, তাঁর অভিজ্ঞতা এবং পরিবেশ রক্ষার প্রতি আগ্রহের কারণে এই অঞ্চলের মানুষজন তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু আশা করছেন।

তাঁরা মনে করেন, পোপ লিও চতুর্দশ, বর্তমান পোপ ফ্রান্সিসের পথ অনুসরণ করে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আরও সক্রিয় হবেন।

আমাযন পৃথিবীর ফুসফুস হিসেবে পরিচিত, যা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই অঞ্চলের বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে, যা উদ্বেগের কারণ।

অবৈধভাবে গাছ কাটা, খনিজ উত্তোলন, এবং ভূমি দখলের মতো ঘটনার কারণে এখানকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খরা এবং দাবানলের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগও বাড়ছে, যা সেখানকার স্থানীয় জনজীবনকে বিপর্যস্ত করছে।

বিশপ প্রিভোস্ট, যিনি বর্তমানে পোপ নির্বাচিত হয়েছেন, তিনি পেরুর চিকলায়োর বিশপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই অঞ্চলের মানুষজনের সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পর্ক ছিল।

তিনি সবসময় সাধারণ মানুষের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করতেন এবং সামাজিক কার্যক্রমের প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল। পেরুর এই অঞ্চলের মানুষের কাছে তিনি ছিলেন খুবই আপনজন।

পোপ লিও চতুর্দশ এর আগে ল্যাটিন আমেরিকার পন্টিফিক্যাল কমিশনের প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন, যার মাধ্যমে তিনি আমাজন অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত নয়টি দেশের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন। এই অঞ্চলের পরিবেশ সুরক্ষার জন্য তিনি বিভিন্ন আন্তঃধর্মীয় এবং আদিবাসী সংগঠনগুলির সঙ্গেও কাজ করেছেন।

এই কারণে আমাজনের ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের মানুষজন মনে করেন, নতুন পোপ এই অঞ্চলের সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।

আমাযন অঞ্চলে বসবাসকারী অনেক ক্যাথলিক এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ বিশ্বাস করেন যে, পোপ ফ্রান্সিসের ‘লাউদাতো সি’ (Laudato Si) নামক পরিবেশ বিষয়ক এনসাইক্লিক্যাল (Encylical) এর ধারাবাহিকতায় পোপ লিও-ও পরিবেশ রক্ষার জন্য কাজ করবেন।

তাঁরা আশা করছেন, পোপ লিও শুধু সমর্থনই দেবেন না, বরং সরাসরি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

আদিবাসী নেত্রী লরা ভিকুনার মতো অনেকেই আশা করছেন, নতুন পোপ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁদের পাশে থাকবেন। আগামী নভেম্বরে ব্রাজিলের বেলেমে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন (COP30) -এ পোপের উপস্থিতি এই অঞ্চলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে।

আয়ারল্যান্ডের ফাদার পিটার হিউজেস, যিনি দীর্ঘদিন ধরে পেরুতে বসবাস করছেন, তিনি জানান, পোপ প্রিভোস্টের সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্ক ছিল। তাঁদের মধ্যে আমাজনের পরিবেশ এবং সেখানকার দরিদ্র মানুষের জীবন নিয়ে আলোচনা হতো।

এখন পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে, তাই এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

পোপ লিও চতুর্দশ-এর এই পদক্ষেপগুলো শুধু আমাজন অঞ্চলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *