ধ্বংসস্তূপের মাঝেও নাবাতিয়ার সোমবারের বাজার: ইসরায়েলের বোমা হামলায়ও ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প!

লেবাননের নাবাতিয়েহ’র সোমবারের বাজার: ধ্বংসস্তূপের মাঝে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প।

বাংলাদেশের বাজারের মতোই, লেবাননের নাবাতিয়েহ শহরের সোমবারের বাজারটিও এক প্রাণবন্ত স্থান। যুদ্ধ আর ধ্বংসের চিহ্নগুলো সরিয়ে, এখানকার ব্যবসায়ীরা আবারও তাদের পসরা সাজাচ্ছেন, যেন এক নতুন শুরুর ইঙ্গিত।

ইসরায়েলি বোমা হামলায় বাজারটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, এখানকার মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর অদম্য ইচ্ছাই যেন এখানকার মূল আকর্ষণ।

নাবাতিয়েহ শহরের এই বাজারের সঙ্গে মিশে আছে এখানকার মানুষের আবেগ আর ইতিহাস। মামলুক ও অটোমান সাম্রাজ্যের সময় থেকে এর যাত্রা শুরু। একসময় ফিলিস্তিন ও লেবাননের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য চলত এই বাজারের পথ ধরে।

তাই এটি শুধু একটি বাজার নয়, বরং দক্ষিণ লেবাননের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যুদ্ধের কারণে বাজারের অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে, কিন্তু এখানকার মানুষের মনে সেই পুরনো দিনের স্মৃতি আজও উজ্জ্বল।

সানা খেরেইস নামের এক নারী, যিনি কাপড়ের ব্যবসা করেন, তিনি বলেন, “সোমবারের বাজার সবসময়ই আমার কাছে বিশেষ। এখানে সবসময় অনেক মানুষের আনাগোনা থাকে।”

যুদ্ধের আগে তিনি প্রচুর কাপড় বিক্রি করতেন, কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। এখন সবাই প্রয়োজন অনুযায়ী জিনিসপত্র কেনেন।

সানা’র স্বামী ইউসুফ আগে ছিলেন স্থানীয় পৌরসভার ড্রাইভার। যুদ্ধের কারণে তিনি চাকরি হারান। এখন তিনি স্ত্রীর সঙ্গে বাজারে বসেন।

যুদ্ধের ভয়াবহতা তাদের জীবন বদলে দিয়েছে, কিন্তু তারা হাল ছাড়েননি। তাদের চোখেমুখে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন।

এই বাজারে পাওয়া যায় না এমন কিছুই নেই। জুতো, খেলনা, মশলা থেকে শুরু করে কাপড়, বই, খাদ্য ও ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী—সবকিছুই এখানে পাওয়া যায়।

ধ্বংসস্তূপের মাঝেও ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন, যেন যুদ্ধ তাদের মনোবল ভাঙতে পারেনি।

তবে যুদ্ধের ক্ষত এখনো স্পষ্ট। বাজারের পুরনো ভবনগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। তারপরও, ব্যবসায়ীরা তাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

তারা চান, তাদের এই বাজার আবার আগের রূপে ফিরে আসুক।

জিহাদ আবদাল্লাহ নামের আরেকজন ব্যবসায়ী, যিনি পোশাক বিক্রি করেন, তিনি জানান যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর তিনি সবার আগে বাজারে ফিরে এসেছিলেন। সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা হওয়ায়, এখানকার বাজার সম্পর্কে তার ভালো ধারণা আছে।

তিনি জানেন, কীভাবে ব্যবসা করতে হয়।

আব্বাস সবেইতি নামের আরেকজন ব্যবসায়ী, যিনি শিশুদের পোশাক বিক্রি করেন, ৩০ বছর ধরে এই বাজারের সঙ্গে জড়িত। তার বাবা ও দাদার হাত ধরে এই ব্যবসা এসেছে।

যুদ্ধের কারণে তিনি অনেক ক্ষতির শিকার হয়েছেন, কিন্তু তিনি এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

নাবাতিয়েহ শহরের মেয়র খোদর কোদেইহ জানান, বাজারটি পুনর্গঠন করতে কমপক্ষে দুই বছর সময় লাগবে।

তিনি লেবাননের সরকারের সাহায্য নিয়ে এখানকার বাজারকে আগের রূপে ফিরিয়ে আনতে চান।

স্থানীয় বাসিন্দা আবি’র বাদরান বলেন, “ইসরায়েলিরা আমাদের এই ভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়, কিন্তু আমরা তাদের তা করতে দেব না।”

বৃষ্টি আর প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, নাবাতিয়েহ শহরের মানুষ তাদের জীবনকে ভালোবাসে। তারা ধ্বংসস্তূপের মাঝেও হাসতে জানে, আর নতুন করে বাঁচতে চায়।

তাদের এই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প, বাংলাদেশের মানুষের কাছেও এক অনুপ্রেরণা।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *