মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দ্রুত বাড়ছে টিএইচসি মিশ্রিত পানীয়ের চাহিদা। স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং একটি আইনি ফাঁকফোকরের সুযোগ নিয়ে এই বাজারের উত্থান ঘটছে দ্রুত গতিতে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে এই ব্যবসার প্রসার বিপুলভাবে বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মানুষ এখন ‘ক্যালিফোর্নিয়া সোবার’ জীবনযাত্রার দিকে ঝুঁকছে। এর মানে হলো, তারা মদ্যপান কমিয়ে দিচ্ছে এবং তার বদলে গাঁজা বা মারিজুয়ানা সেবনের চেষ্টা করছে। এই পরিবর্তনের ফলস্বরূপ, টিএইচসি-যুক্ত পানীয়ের বাজারও বাড়ছে।
এই পানীয়গুলোতে ক্যানাবিসের প্রধান উপাদান টিএইচসি (টেট্রাহাইড্রোকানাবিনল) থাকে, যা মাদকতার অনুভূতি তৈরি করে।
২০১৮ সালের একটি কৃষি বিল বা ফার্ম বিলের কারণে টিএইচসি পানীয় প্রস্তুতকারকদের জন্য বাজার তৈরি হয়েছে। এই বিলে শণ বা হেম্প (hemp) গাছের উৎপাদনকে বৈধতা দেওয়া হয়, যেখানে ০.৩% এর কম পরিমাণে ডেল্টা-৯ টিএইচসি থাকে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেক কোম্পানি দ্রুত তাদের পণ্য বাজারে এনেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৮ সালের আগে এই ধরনের পানীয়ের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। ২০১৯ সালে এই বাজারের আকার ছিল মাত্র ৪ লক্ষ মার্কিন ডলার। কিন্তু বর্তমানে, এই বাজার কয়েকগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৮২ মিলিয়ন ডলারে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার সমান (ডলারের বিনিময় হার পরিবর্তনশীল)।
আগামী বছর এটি আরও বেড়ে ৫৭২ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
টিএইচসি পানীয় প্রস্তুতকারকদের জন্য বর্তমানে কিছু বিধিনিষেধ শিথিল রয়েছে, যা মারিজুয়ানা কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে, কিছু উদ্যোক্তা চান নিয়ন্ত্রণের একটি মাঝামাঝি অবস্থা। কারণ, খুব কম নিয়ন্ত্রণ থাকলে, কম বয়সী ছেলেমেয়েদের কাছে এই পণ্য পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আবার বেশি নিয়ন্ত্রণ ব্যবসার বৃদ্ধিতে বাধা দিতে পারে।
এই বাজারে টিকে থাকার জন্য কোম্পানিগুলো বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। ক্যান (Cann) এবং হাই সেল্টজারের (hi Seltzer) মতো ব্র্যান্ডগুলো এরই মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ক্যান তাদের পানীয় তৈরি করে হেম্প থেকে টিএইচসি ও সিবিডি (ক্যানাবিডিওল) সংগ্রহ করে।
অন্যদিকে, হাই সেল্টজার ফল-ফ্লেভারের পানীয় তৈরি করে, যেখানে খুব সামান্য পরিমাণে টিএইচসি থাকে। এছাড়া, ব্রেজ (BRĒZ) নামের একটি কোম্পানিও তাদের পণ্যে লায়ন’স ম্যান মাশরুম ব্যবহার করে দ্রুত ব্যবসা বাড়াচ্ছে।
ঐতিহ্যবাহী অ্যালকোহল প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোও এখন এই বাজারে প্রবেশ করছে। শিকাগোর একটি কোম্পানি, হোপওয়েল ব্রুইং কোম্পানি (Hopewell Brewing Company) তাদের নতুন টিএইচসি-যুক্ত পানীয় ‘চুম’ (Choom) বাজারে এনেছে।
তবে, এই বাজারের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। ফেডারেল সরকার যদি কড়া পদক্ষেপ নেয়, তাহলে এই ব্যবসার ওপর প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া, ফার্ম বিলে কোনো পরিবর্তন এলে হেম্পের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যা টিএইচসি পানীয়ের বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বাজারের স্থিতিশীলতার জন্য ফেডারেল পর্যায়ে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন। রাজ্য সরকারগুলোও তাদের নিজস্ব নিয়ম তৈরি করছে, যা ব্যবসার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন