ইউরোপের অনেক জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড়, বাড়ছে ‘ওভারট্যুরিজম’-এর সমস্যা।
পর্যটকদের অতিরিক্ত আনাগোনায় ইউরোপের বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থানগুলোতে এখন এক নতুন সংকট তৈরি হয়েছে। ‘ওভারট্যুরিজম’ বা অতিরিক্ত পর্যটকদের আনাগোনা—এই সমস্যা বর্তমানে বেশ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গ্রিসের একটি দ্বীপ, জাকিন্থোস (Zakynthos), বর্তমানে পর্যটকদের চাপে সবচেয়ে বেশি জর্জরিত। এখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের তুলনায় পর্যটকদের রাত্রিবাস সংখ্যা ১৫০ গুণ বেশি!
পর্যটকদের অতিরিক্ত চাপে সেখানকার স্থানীয় জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। বাড়ি ভাড়ার আকাশছোঁয়া দাম, পরিবেশ দূষণ এবং স্থানীয় পরিষেবাগুলিতে চাপ সৃষ্টি হওয়ায় অনেক জায়গার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।
পর্যটকদের চাপে পড়া স্থানগুলোর মধ্যে ইতালির একটি ছোট গ্রাম, রোক্কারাসো’র (Roccaraso) ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। টিকটক (TikTok) তারকা রিতা দে ক্রেসেনজোর (Rita de Crescenzo) কারণে সেখানে অতিরিক্ত পর্যটকদের আগমন ঘটেছিল। এর ফলে সেখানকার মেয়রকে সেনাবাহিনীর সাহায্য চাওয়ার হুমকি দিতে হয়।
এছাড়াও, পর্যটকদের ঘনত্বের দিক থেকে প্যারিস (Paris) শীর্ষ স্থানে রয়েছে। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে এখানে প্রায় ৪ লক্ষ ১৮ হাজার পর্যটকের রাত্রিবাস হয়। এরপরের স্থানটিতে রয়েছে গ্রিসের রাজধানী এথেন্স।
পর্যটকদের চাপ কমাতে কিছু দেশ বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে। ক্রোয়েশিয়ার ইস্ত্রিয়া (Istria) এবং পোল্যান্ড, উত্তর মেসিডোনিয়া ও রোমানিয়ার কিছু স্থানকে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা চলছে।
নরওয়ের জন মায়েন (Jan Mayen) দ্বীপটিতে পর্যটকদের আনাগোনা একেবারে কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু স্থান পর্যটনকে কেন্দ্র করে তাদের উন্নয়ন ঘটিয়েছে, যেমন—ব্ল্যাকপুল, লাস ভেগাস এবং অরল্যান্ডো। কিন্তু যারা পর্যটনের সঙ্গে পরিচিত নয়, তাদের ক্ষেত্রে এই অতিরিক্ত ভিড় একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বার্সেলোনা (Barcelona) এবং প্রাগের (Prague) মতো পুরাতন শহরগুলোতেও একই ধরনের সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
অন্যদিকে, ইউরোপের অনেক স্থানে এখনো পর্যটকদের আনাগোনা বেশ কম। বুলগেরিয়ার তার্গোভিশতে (Targovishte), ইতালির বেনেভেন্টোতে (Benevento), পোল্যান্ডের রাইবনিকের (Rybnik) মতো স্থানগুলো তুলনামূলকভাবে অনেক শান্ত।
এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে তাদের ধারণক্ষমতা বিবেচনা করে পদক্ষেপ নিতে হবে। একইসঙ্গে, পর্যটকদের সচেতনতাও জরুরি।
অতিরিক্ত পর্যটনের ফলে পরিবেশ ও স্থানীয় সংস্কৃতির ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, সে সম্পর্কে সবাইকে অবগত হতে হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান