যুক্তরাজ্যে জিন প্রকৌশল: কেমন হবে নতুন শিমের স্বাদ?

যুক্তরাজ্যে (UK) উদ্ভাবিত নতুন ধরনের শিম, যা খাদ্য নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এরিক হলোবের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী এক দশকের বেশি সময় ধরে গবেষণা করে তিনটি নতুন জাতের শিম তৈরি করেছেন, যা যুক্তরাজ্যের আবহাওয়ায় চাষের উপযোগী। এই উদ্ভাবন বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি উন্নয়নেও নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে।

নতুন উদ্ভাবিত শিমের জাতগুলোর নাম রাখা হয়েছে অলিভিয়া, গডiva এবং ক্যাপুলেট। এই শিমগুলো ঠান্ডা আবহাওয়ায় দ্রুত অঙ্কুরিত হতে পারে এবং এদের শক্তিশালী শিকড় ব্যবস্থা রয়েছে।

মে মাসে রোপণ করে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এগুলো সংগ্রহ করা যায়, যা যুক্তরাজ্যের বৃষ্টিপাতের মৌসুমের আগেই সম্পন্ন করা সম্ভব।

অধ্যাপক হলোব জানান, এই শিমগুলো উদ্ভাবনের মূল উদ্দেশ্য ছিল উন্নত মানের শস্য উৎপাদন করা। প্রচলিত প্রজনন ও জিনগত কৌশল ব্যবহার করেই এটি সম্ভব হয়েছে।

খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা মেটাতে শিমের গুরুত্ব বর্তমানে অনেক বেড়েছে। স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত খাবারের প্রতি মানুষের আগ্রহের কারণে শিমের চাহিদা বাড়ছে।

যুক্তরাজ্যে এখন অনেকে ফ্লেক্সিটোরিয়ান, অর্থাৎ যারা মাঝে মাঝে মাংস খান, তাদের সংখ্যাও বাড়ছে।

এই শিমগুলো বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করার জন্য ‘নিউট্রাল ফুড’ নামের একটি স্থানীয় উদ্যোগ কাজ করছে।

স্থানীয় কৃষক, পরিবেশক এবং খুচরা বিক্রেতাদের একত্রিত করে এই প্রকল্পের মাধ্যমে শস্য উৎপাদন ও বাজারজাত করা হচ্ছে। ওয়ারউইকশায়ারের ‘জিরো স্টোর’-এ ইতোমধ্যে এই শিম পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশেও ডালের (pulse) গুরুত্ব অনেক। এটি আমাদের খাদ্য তালিকার একটি অপরিহার্য অংশ।

বিভিন্ন ধরনের ডাল যেমন- মসুর, মুগ, ছোলা, মটর ইত্যাদি আমাদের দেশে উৎপাদিত হয়। যুক্তরাজ্যের এই উদ্ভাবন, বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের দেশেও শস্য উৎপাদন একটি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যুক্তরাজ্যের এই নতুন ধরনের শিম উদ্ভাবন, উন্নত বীজ উৎপাদন এবং জলবায়ু-সহিষ্ণু শস্য তৈরির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

অধ্যাপক হলোব মনে করেন, এই ধরনের উদ্ভাবন শুধু খাদ্য উৎপাদন বাড়াবে না, বরং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রায়ও সহায়তা করবে।

স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শস্য ব্যবহারের ফলে খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খল ছোট হয়, যা ভোক্তাদের জন্য খাবারের খরচ কমাতে সাহায্য করে। ভবিষ্যতে হয়তো, আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরাও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানানসই শস্য উৎপাদনে এমন উদ্ভাবনী পদক্ষেপ নিতে পারবেন, যা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *