মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ নিরসনের লক্ষ্যে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আলোচনা শুরু হয়েছে। শনিবার চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এই খবর নিশ্চিত করেছে।
এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হলো, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে আরোপিত বিশাল শুল্কের কারণে সৃষ্ট বাণিজ্য বিরোধের অবসান ঘটানো।
আলোচনায় চীনের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভাইস প্রিমিয়ার হে লিফেং, এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট। যদিও বেসেন্ট বৈঠকের ফল নিয়ে এখনই বড় ধরনের কোনো চুক্তির সম্ভাবনা দেখছেন না, তবে এটিকে আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছেন।
বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর সর্বনিম্ন ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। চীনও এর জবাবে মার্কিন পণ্য আমদানিতে ১২৫ শতাংশ শুল্ক বসাচ্ছে।
এর ফলস্বরূপ, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে বলে জানা গেছে। বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্কের এই হারে পরিবর্তন না আসলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা কম।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বাণিজ্য স্বাভাবিক করতে হলে শুল্কের হার অন্তত ৫০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে।
অন্যদিকে, শুক্রবার মার্কিন বাণিজ্য কর্মকর্তারা সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বক্তব্যে চীনের পণ্যের ওপর শুল্ক ৮০ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেন।
একইসঙ্গে তিনি চীনের বাজারকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও উন্মুক্ত করার দাবি জানান।
এই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তার প্রভাব বাংলাদেশের ওপরও পড়তে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার বাণিজ্য সম্পর্ক পরিবর্তন হলে, তা বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি চীন থেকে আমদানি করা কোনো পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি পায়, তাহলে সেই পণ্যের দাম বাংলাদেশের বাজারে বেড়ে যেতে পারে, যা সরাসরি ভোক্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
আবার, চীন যদি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের পরিবর্তে অন্য কোনো দেশে তাদের পণ্য রপ্তানি করতে শুরু করে, তাহলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারেও তার প্রভাব পড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই আলোচনার ফল বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে, বিশ্ব অর্থনীতির পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তবে, শুল্ক কমানোর বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত, এই বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
ভবিষ্যতে এই বাণিজ্য আলোচনার ফলাফল কেমন হয়, সেদিকেই এখন সবার দৃষ্টি। বিশ্ব অর্থনীতির এই জটিল পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের জন্য সঠিক নীতি গ্রহণ করে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন