১১ বছর পর মুখ ফিরে পেলেন আত্মঘাতী যুবক!…

শিরোনাম: ১১ বছর আগে আত্মহত্যার চেষ্টা, অবশেষে জীবন বদলে দেওয়া মুখ প্রতিস্থাপন: ডেরেক প্রাফের নতুন জীবন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা ৩০ বছর বয়সী ডেরেক প্রাফ, ১১ বছর আগে আত্মহত্যার একটি ব্যর্থ চেষ্টার পর অবশেষে জীবন পরিবর্তনকারী একটি মুখ প্রতিস্থাপন করতে পেরেছেন। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মুখ নিয়ে বেঁচে থাকার পর, এই অস্ত্রোপচার যেন তার জীবনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

২০০৪ সালের ৫ই মার্চ, ১৯ বছর বয়সী ডেরেক, যিনি কলেজে গ্রীষ্মের ছুটিতে বাড়ি ফিরেছিলেন, নিজের জীবন শেষ করার চেষ্টা করেন। মারাত্মকভাবে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। তার বাবা জেরি প্রাফ তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। এরপর শুরু হয় তার জীবনের এক কঠিন অধ্যায়। বন্দুকের গুলিতে ডেরেক মুখমন্ডলের গুরুতর অংশ হারান। এরপর তিনি এক চোখ হারান, নাক এবং ঠোঁট প্রায় পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

চিকিৎসকরা জানান, এরপর তার মুখের পুনর্গঠনের জন্য দীর্ঘ এবং জটিল প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০১৪ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি ৫৮টি অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। এরপর চিকিৎসকরা জানান, তাদের আর কিছু করার নেই। ডেরেক সমাজের আলো থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন। বাইরের জগৎ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন তিনি।

ডেরেক জানান, “আমি জনসম্মুখে যেতাম না। লোকেরা আমার দিকে আঙুল তুলত, নানা কথা বলত, যা খুবই কষ্টের ছিল।” ডেরেকের মা লিসা প্রাফ বলেন, “ছেলেকে এভাবে দেখে আমার খুব কষ্ট হত।”

তবে ডেরেকের জীবনে নতুন আশা জাগে যখন তিনি জানতে পারেন যে তিনি মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের রচেস্টারের মায়ো ক্লিনিকে (Mayo Clinic) মুখ প্রতিস্থাপনের জন্য উপযুক্ত। অবশেষে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি একজন উপযুক্ত দাতার সন্ধান পান। এরপর চলে অস্ত্রোপচার এবং পরবর্তী কিছু প্রক্রিয়া। অস্ত্রোপচারের পর ডেরেক আবার একটি স্বাভাবিক মুখ ফিরে পান।

মায়ো ক্লিনিকে ডেরেক দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি এমন মুখ প্রতিস্থাপন করিয়েছেন। সারা বিশ্বে এ ধরনের অস্ত্রোপচার হওয়া রোগীর সংখ্যা প্রায় ৫০ জনের কাছাকাছি। লিসা প্রাফ তার ছেলের এই রূপান্তরকে “আশ্চর্যজনক” বলে অভিহিত করেছেন। ডেরেকের চিকিৎসার খরচ যোগাতে একটি GoFundMe পেজ খোলা হয়েছে, যেখানে মানুষজন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

এই মুহূর্তে, GoFundMe পেজটিতে প্রায় ২৮৫,৮৯৫ মার্কিন ডলার (যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ কোটি টাকার বেশি) উঠেছে, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

ডেরেক এর এই জীবনযুদ্ধ আমাদের মনে করিয়ে দেয় মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব। আমাদের দেশেও অনেক মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যায় ভোগেন। যদি কোনো ব্যক্তি আত্মহত্যার কথা ভাবেন, তবে দ্রুত পরিবারের সদস্য, বন্ধু অথবা কোনো মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।

যদি আপনার পরিচিত কেউ এমন পরিস্থিতিতে থাকেন, তবে তাদের পাশে দাঁড়ান এবং সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকুন। প্রয়োজনে, আপনি আপনার এলাকার কোনো মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

তথ্যসূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *