যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি ডেভিড সাউটারের প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করা হচ্ছে। ১৯৯০ সালে জর্জ এইচ. ডব্লিউ. বুশের আমলে নিয়োগ পাওয়া এই বিচারক তার কর্মজীবনে রক্ষণশীলতার চেয়ে উদারনৈতিক বিচারক হিসেবে বেশি পরিচিত ছিলেন। সম্প্রতি তার প্রয়াণের খবর আসে, যা বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটালো।
**ডেভিড সাউটারের সংক্ষিপ্ত জীবন ও কর্ম**
ডেভিড সাউটার ছিলেন একজন ব্যতিক্রমী বিচারক। নিউ হ্যাম্পশায়ারের এই মানুষটি সুপ্রিম কোর্টে যোগ দেওয়ার আগে সেখানকার অ্যাটর্নি জেনারেল এবং স্টেট সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সুপ্রিম কোর্টে তার নিয়োগ নিয়ে অনেকের মনেই কৌতূহল ছিল, কারণ তিনি পরিচিত ছিলেন না কোনো জাতীয় ইস্যুতে।
তবে, বিচারক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি তার নিজস্ব চিন্তাভাবনা ও বিচারিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেন।
সাউটারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল গর্ভপাতের অধিকার রক্ষার বিষয়টি। ১৯৭৩ সালের ‘রoe বনাম ওয়েড’ মামলার রায় বহাল রাখতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া, চার্চ ও রাষ্ট্রের পৃথকীকরণ, অর্থাৎ ধর্ম ও সরকারের মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়েও তিনি স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছিলেন।
২০০০ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ‘বুশ বনাম গোর’ মামলায় সাউটারের ভিন্নমত ছিল বেশ উল্লেখযোগ্য। ফ্লোরিডায় ভোট পুনর্গণনা বন্ধ করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে তিনি নির্বাচনের ফলাফলের ক্ষেত্রে আদালতের হস্তক্ষেপের সমালোচনা করেন।
সাউটার সবসময় তার সততা ও গভীর জ্ঞানের জন্য পরিচিত ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন খুবই নির্জনতাপূর্ণ। আদালতের কার্যক্রম শেষে তিনি নিউ হ্যাম্পশায়ারে নিজের বাড়িতে ফিরে যেতেন, যেখানে বই ছিল তার প্রধান সঙ্গী।
**বিচারিক দর্শন ও প্রভাব**
বিচারপতি সাউটার তার উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অনেকের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। তিনি সবসময় সংবিধানের ব্যক্তি স্বাধীনতা, সমতা এবং সংখ্যালঘুদের অধিকারের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। তার এই দৃষ্টিভঙ্গি তাকে রক্ষণশীল বিচারকদের থেকে আলাদা করেছে।
সুপ্রিম কোর্টে সাউটারের ১৯ বছরের কর্মজীবন অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার সাক্ষী। তার দেওয়া রায়গুলো যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের ইতিহাসে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তিনি শুধু আইন প্রণয়নেই ভূমিকা রাখেননি, বরং সমাজের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও নিজের মতামত দিয়েছেন, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
ডেভিড সাউটার তার কাজের মাধ্যমে দেখিয়েছেন, একজন বিচারক কেবল আইনের শাসনের রক্ষকই নন, বরং সমাজের পরিবর্তনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। তার প্রয়াণে বিচার বিভাগের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, তবে তার আদর্শ ও কাজগুলো মানুষের মাঝে সবসময় বেঁচে থাকবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন