কানাডার বন্য প্রকৃতির বুক চিরে ছুটে চলা ‘সكينا’ : একটি সাশ্রয়ী রেল ভ্রমণ
কানাডার বিস্তীর্ণ প্রান্তরের বুক চিরে বয়ে গেছে রেলপথ, আর সেই পথ ধরে ছুটে চলে ‘সكينا’ নামের একটি বিশেষ ট্রেন। যারা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই ট্রেন ভ্রমণ হতে পারে দারুণ এক অভিজ্ঞতা।
যারা একটু সাশ্রয়ী ভ্রমণ করতে চান, তাদের জন্য এটি কানাডার বিখ্যাত ‘রকি মাউন্টেনিয়ার’ ট্রেনের থেকে কোনো অংশে কম নয়।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের প্রিন্স রুপার্ট থেকে যাত্রা শুরু করে আলবার্টার জাসপারে গিয়ে শেষ হয় এই রেলপথের যাত্রা। মাঝে রয়েছে প্রিন্স জর্জ শহর।
প্রায় ৭২০ মাইল (১,১৫৯ কিলোমিটার) দীর্ঘ এই ভ্রমণে সময় লাগে প্রায় ২১ ঘণ্টা।
সكينا ট্রেনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো, এটি দুর্গম অঞ্চলের মানুষের জন্য এক নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। স্থানীয়রা যেন এটিকে একটি বাস হিসেবে ব্যবহার করে।
পথে ট্রেন থামানোর প্রয়োজন হলে তারা পতাকা অথবা উজ্জ্বল রঙের পোশাক দিয়ে সংকেত দেয়, আর ট্রেনটি তাদের জন্য থেমে যায়।
শুধু স্থানীয়রাই নয়, বনকর্মী, শিকারি, এমনকি পথ হারিয়ে যাওয়া পর্যটকদেরও তারা সাহায্য করে।
ট্রেনের ভেতরের পরিবেশ বেশ আরামদায়ক। ১৯৫০ দশকের পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে দেয় এর ডিজাইন।
প্রতিটি যাত্রীর জন্য রয়েছে চামড়ার তৈরি আলাদা আসন, আর ট্রেনের দুই পাশে রয়েছে বড় বড় জানালা।
ট্রেনের পেছনের দিকে আছে একটি ক্যাফে ও লাউঞ্জ কার, যেখানে বসে বাইরের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
এই ট্রেনের জানালা দিয়ে দেখা যায় বনের সবুজ আর পাহাড়ের চূড়ার বরফ। কখনো দেখা যায় বিশাল জলপ্রপাত, আবার কখনো গিরিখাতের পাশ দিয়ে ছুটে চলা পথ।
এই পথে চলতে চলতে চোখে পড়ে আদিবাসী জনপদ, যেখানে স্থানীয় ‘ফার্স্ট নেশনস’ সম্প্রদায়ের মানুষেরা হাজার বছর ধরে বসবাস করে আসছেন।
বুনো প্রাণীদেরও দেখা মেলে এখানে। ঈগল পাখির ওড়াউড়ি, হরিণের দল কিংবা ভাল্লুকের আনাগোনা মুগ্ধ করে তোলে যাত্রীদের।
প্রিন্স জর্জ শহরে রাতের বিশ্রাম শেষে, পরের দিন সকালে যাত্রা আবার শুরু হয়। ট্রেনের জানালা দিয়ে দেখা যায় সূর্যোদয়, যা নদীর জলে সোনালী আভা ছড়ায়।
এক সময়ের কাঠ ব্যবসার কেন্দ্র, এখন ধীরে ধীরে তার পুরনো রূপ হারাচ্ছে।
পথে ছোট ছোট জনপদ, মাঝে মাঝে পাহাড় আর বরফের চাদরে ঢাকা পর্বতমালা—সব মিলিয়ে এক অসাধারণ দৃশ্য।
কানাডার এই রেল ভ্রমণ যেন প্রকৃতির এক অপরূপ রূপ।
যারা প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই ট্রেন ভ্রমণ একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা হতে পারে।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক