বিখ্যাত মার্কিন অভিনেতা কেলসি গ্রামার, যিনি “ফ্র্যাজিয়ার” (Frasier) টিভি সিরিজে তাঁর ভূমিকার জন্য সুপরিচিত, সম্প্রতি তাঁর ১৪ বছরের দাম্পত্য জীবন এবং বোনের মর্মান্তিক মৃত্যুর স্মৃতি নিয়ে মুখ খুলেছেন। তাঁর নতুন বই, “কারেন: আ ব্রাদার রিমেম্বারস” (Karen: A Brother Remembers)-এ তিনি ১৯৭৫ সালে তাঁর বোন কারেনের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
এই শোকের সময়ে, কেলসি তাঁর স্ত্রীর সমর্থনকে গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন।
গ্রামার তাঁর দীর্ঘ বিবাহিত জীবনের সাফল্যের চাবিকাঠি হিসেবে একটি বিশেষ ‘মন্ত্র’-এর কথা উল্লেখ করেছেন। এই মন্ত্রটি জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী হুইটনি হিউস্টনের একটি গান থেকে অনুপ্রাণিত।
তিনি বলেন, “ভালোবাসা একটা ‘স্পর্শের খেলা’।” তিনি আরও যোগ করেন, “মাঝে মাঝে, সেই ভালোবাসাকে কিছু কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হয়।” কেলসি তাঁর স্ত্রীর কাছে প্রথম সাক্ষাতের সময়কার আবেগ ও ভালোবাসার স্মৃতি মনে রাখার চেষ্টা করেন।
কেলসি এবং তাঁর স্ত্রী কেইট ওয়ালশ, যিনি একসময় বিমান পরিচারিকা ছিলেন, ২০১১ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের তিনটি সন্তান রয়েছে: কন্যা ফেইথ (১২) এবং পুত্র গ্যাব্রিয়েল (১০) ও জেমস (৮)।
কেলসির আগের সম্পর্ক থেকে আরও তিনটি সন্তান রয়েছে।
বইটি লেখার সময় কেইট ওয়ালশ কেলসিকে “অত্যন্ত সমর্থন” জুগিয়েছেন। বইটি লেখার প্রক্রিয়াটি ছিল কঠিন, কারণ এতে ১৯৭৫ সালে তাঁর ১৮ বছর বয়সী বোন কারেনের নৃশংস ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
কেলসি জানান, বইটি লেখার পর তিনি যখন কেইটকে বলেছিলেন যে তাঁর কাজ শেষ হয়েছে, তখন কেইট বলেছিলেন, “আমি তোমাকে মিস করেছি।”
বইটি লেখার সময় কেলসি অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “আমি অনেক সময় ধরে একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকতাম। কিন্তু কেইট ধৈর্য ধরে আমাকে ভালোবাসতেন। আমার জীবনের অনেক আনন্দ হারিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু কেইট তা ফিরিয়ে এনেছিলেন।”
বইটিতে, কেলসি তাঁর বোন কারেনকে এমন একজন মানুষ হিসেবে তুলে ধরেছেন যিনি জীবনকে ভালোবাসতেন এবং প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতেন। কারেন ছিলেন প্রাণবন্ত ও ভালোবাসাপূর্ণ একজন নারী, যাঁর জীবন একটি ভয়াবহ ঘটনার মাধ্যমে হঠাৎ করে শেষ হয়ে যায়।
কেলসি বলেন, “আমি চেয়েছিলাম তাঁর জীবনে আবার আলো জ্বালাতে এবং তাঁকে এই পৃথিবীতে স্বাগত জানাতে।”
কারেন তাঁর মৃত্যুর আগে কলোরাডো স্প্রিংস-এ চলে যান। ১৯৭৫ সালের ৩০শে জুন কেলসির সঙ্গে তাঁর শেষ কথা হয়।
কারেন জানিয়েছিলেন, তিনি জুলাই মাসের চতুর্থ তারিখের পরে ফ্লোরিডায় ফিরবেন। কিন্তু এরপর আর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। পরে কেলসি স্থানীয় পুলিশের কাছে খবর দেন।
জানা যায়, কারেন যে রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন, সেখানে ডাকাতির উদ্দেশ্যে আসা কয়েকজন ব্যক্তি তাঁকে ধরে নিয়ে যায় এবং ধর্ষণ করে হত্যা করে।
এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ফ্রেডি গ্লেন নামের এক ব্যক্তিকে কারেনকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কেলসি অতীতে বলেছিলেন যে তিনি গ্লেনকে ক্ষমা করেছেন, তবে তিনি এখনও তাঁকে তাঁর কৃতকর্মের জন্য দায়ী করেন।
তিনি বলেন, “আপনি যদি কাউকে ক্ষমা করতে না পারেন, তবে নিজেকে কষ্ট দেওয়া ছাড়া আর কিছু থাকে না। তবে যিনি ইচ্ছাকৃতভাবে আপনার ভালোবাসার মানুষকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন, তাঁকে ক্ষমা করা কঠিন। আমি ক্ষমা করতে পারি, কিন্তু তাঁকে তাঁর কাজের ফল ভোগ করতে হবে।”
এই বিষয়টি তিনি তাঁর ছোট সন্তানদেরও শেখান এবং তাঁদের রাগ ধরে না রাখার জন্য উৎসাহিত করেন।
কেলসি বলেন, “আমার বাচ্চারা মাঝে মাঝে বলে, ‘আমি [ফ্রেডি গ্লেনকে] মারতে চাই’। আমি তাদের বলি, ‘আমি বুঝি এবং সম্মান করি, তবে তোমরা জীবনে এর চেয়ে বেশি কিছু চাও।’”
“কারেন: আ ব্রাদার রিমেম্বারস” বইটির শেষে কেলসি কলোরাডো স্প্রিংসে যান, যেখানে কারেনের জীবনের শেষ দিনগুলো কেটেছিল। তিনি বলেন, “আমি তাঁর প্রতি আমার বিদায় সম্পূর্ণ করতে চেয়েছিলাম।
সেখানে গিয়ে সবকিছু গুছিয়ে আনা আমার জন্য খুব দরকার ছিল।
তথ্য সূত্র: পিপল