ফুলের দাম বৃদ্ধিতে মায়ের দিবসের আনন্দ ফিকে?

মায়ের দিবস উপলক্ষ্যে ফুল ব্যবসার ওপর শুল্কের প্রভাব : সংকটে মার্কিন ফুল ব্যবসায়ীরা।

বিশ্ব অর্থনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। এর ঢেউ লাগে প্রতিটি দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্যে, যা অনেক সময় সরাসরি প্রভাব ফেলে ভোক্তাদের উপর।

সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি শুল্কের কারণে সেখানকার ফুল ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বেশ বিপাকে। বিশেষ করে, মা দিবসের মতো ফুলের চাহিদা-প্রধান মৌসুমে এই শুল্কের কারণে ব্যবসার উপর পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফুলের বাজারের সিংহভাগই আসে বাইরে থেকে। দেশটির কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৮০ শতাংশ ফুল আসে কলম্বিয়া, কানাডা এবং ইকুয়েডর থেকে।

এর মধ্যে কলম্বিয়া ও ইকুয়েডর থেকেই আসে অধিকাংশ ফুল। বছরের প্রায় সব সময়ই ফুল উৎপাদনের অনুকূল আবহাওয়া বিদ্যমান থাকায় এই দুটি দেশ ফুলের ব্যবসার প্রধান কেন্দ্র। কিন্তু, এই দেশগুলো থেকে ফুল আমদানির উপর শুল্ক আরোপের কারণে ফুলের দাম বাড়ছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে ব্যবসার মুনাফায়।

যুক্তরাষ্ট্রের কন্সাস ব্যুরোর তথ্য বলছে, শুধু ২০২২ সালেই দেশটি প্রায় ২.২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের তাজা ফুল আমদানি করেছে। এর মধ্যে কলম্বিয়ার অবদান ছিল প্রায় ৬০ শতাংশ এবং ইকুয়েডরের ২৫ শতাংশ।

কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ ফুল আমদানির খরচ এখন বেড়ে যাওয়ায় অনেক দোকানে ফুলের দাম বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।

আইওয়া অঙ্গরাজ্যের টিফিনের একটি ফুলের দোকান ‘হাইড্রেনজিয়া ব্লুম’-এর মালিক অ্যালিসন ক্রিভাচেক জানান, শুল্কের কারণে তাদের ব্যবসায়ে মন্দা দেখা দিয়েছে। তার দোকানে লিসিয়ানথাস ফুলের দাম দ্বিগুণ হয়েছে, আর গোলাপের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।

তিনি আরও জানান, মা দিবসের জন্য ফুলের তোড়ার দাম এক বছর আগের ১০০ ডলার থেকে বেড়ে বর্তমানে ১২৫ ডলারে দাঁড়িয়েছে। ক্রিভাচেক বলেন, “আগে যেখানে প্রতিদিন অনেকগুলো অর্ডার আসত, এখন সেখানে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বিক্রি কমে গেছে।”

আমেরিকার স্লো ফ্লাওয়ার সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ডেব্রা প্রিনজিংয়ের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের ফুলের বাজার মূলত আমদানির উপর নির্ভরশীল। “বিষয়টি হয়তো অনেকের পছন্দ নয়, কিন্তু এটাই বাস্তবতা।” – এমনটাই বলেন তিনি।

এই পরিস্থিতিতে অনেক ফুল বিক্রেতা টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। যেমন, তারা স্থানীয় ফুল চাষিদের কাছ থেকে ফুল সংগ্রহ করছেন এবং সরবরাহকারীদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করছেন।

আমেরিকান ফ্লোরিস্টস সোসাইটি জানিয়েছে, ব্যবসায়ীরা এই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন, অনেকটা তারা যেমনটা মহামারীর সময় এবং অন্যান্য সরবরাহ শৃঙ্খলের বিঘ্নতার সময় করেছিলেন।

বাংলাদেশেও বিভিন্ন সময়ে আমদানি শুল্ক বা ট্যাক্সের কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির শিকার হন। অনেক সময় এর প্রভাব সরাসরি ভোক্তাদের উপরও পরে।

উদাহরণস্বরূপ, বিভিন্ন উৎসবের মৌসুমে বিদেশি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক ক্রেতা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে সমস্যায় পড়েন। এক্ষেত্রে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুল ব্যবসায়ীদের এই সংকট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরে।

সব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চেষ্টা করেন। তারা নতুন নতুন উপায় খুঁজে বের করেন, যা তাদের ব্যবসার টিকে থাকতে সাহায্য করে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *