সুদানের একটি কারাগারে ড্রোন হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছে। দেশটির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে লড়াইরত আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর বিরুদ্ধে এই হামলার অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার উত্তর কোরদোফান প্রদেশের ওবেইদ শহরের কারাগারে এই হামলা চালানো হয়, যেখানে আরও ৫০ জন বন্দী আহত হয়েছে।
সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত সরকারের মুখপাত্র এবং তথ্যমন্ত্রী খালিদ আল-এইসার এক বিবৃতিতে আরএসএফ-কে এই হামলার জন্য দায়ী করেছেন। তিনি জানান, আরএসএফ বর্তমানে সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলোতে ড্রোন হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে।
২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে সুদানে সামরিক বাহিনী এবং আরএসএফ-এর মধ্যে গৃহযুদ্ধ চলছে। রাজধানী খার্তুমে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর তা দেশের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়ে।
ওবেইদ শহরটি খার্তুম থেকে ৩৬৩ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত।
আরএসএফ-এর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে, আরএসএফ বন্দর শহর পোর্ট সুদানে কয়েক দিন ধরে ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
এই হামলায় শহরের বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর এবং জ্বালানি সংরক্ষণাগার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে, গত সপ্তাহে সামরিক বাহিনী দক্ষিণ দারফুরের নিয়ালা বিমানবন্দরের ওপর হামলা চালায়, যেখানে আরএসএফ বিদেশি সামরিক সহায়তা, বিশেষ করে ড্রোন পেয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ওই হামলায় আরএসএফ-এর বহু সদস্য নিহত হয়েছে।
পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে, আরএসএফ-এর আর্টিলারি হামলায় একটি উদ্বাস্তু শিবিরে শুক্রবার অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে দুটি পরিবারের সদস্যও ছিল, যাদের মধ্যে বাবা-মা এবং আট সন্তান সহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য ছিল।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আরএসএফ উদ্বাস্তু শিবির এবং এল-ফাশের শহরের ওপর প্রায় প্রতিদিনই হামলা চালাচ্ছে।
আরএসএফ এক বছরের বেশি সময় ধরে উত্তর দারফুরের প্রাদেশিক রাজধানী শহরটি দখলের চেষ্টা করছে।
গত মাসে আরএসএফ সুদানের বৃহত্তম উদ্বাস্তু শিবির জামজামে হামলা চালায়।
এতে ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়। আরএসএফ শিবিরটি নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সেখানকার বাসিন্দারা পালাতে বাধ্য হয়।
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, সুদানে চলমান এই গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ, যাদের মধ্যে ৪০ লাখ প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে।
দুর্ভিক্ষের কারণে খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।
জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এই যুদ্ধ চলাকালীন ধর্ষণ, জাতিগত নিধন সহ যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, বিশেষ করে দারফুর অঞ্চলে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস