মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেইন অঙ্গরাজ্যের স্থানীয় একটি টিভি হোস্ট, ড্যান ক্যাশম্যান, ডেভিড লেটারম্যানের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি লেটারম্যানের অনুষ্ঠান দেখে বড় হয়েছেন এবং তার মতই একজন হোস্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন।
অবশেষে, নিজের স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে চলা তার নিজস্ব নাইট শো, “দ্য নাইট শো উইথ ড্যানি ক্যাশম্যান”-এর শেষ পর্বে তিনি ডেভিড লেটারম্যানকে অতিথি হিসেবে আনতে সক্ষম হন।
ক্যাশম্যানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা মেইনের ওল্ড টাউনে। ডেভিড লেটারম্যানের অনুষ্ঠান তার শৈশবের অন্যতম প্রিয় একটি বিষয় ছিল।
১৯৮২ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এনবিসি’তে এবং ১৯৯৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সিবিএস-এ লেটারম্যানের অনুষ্ঠানগুলো নিয়মিত দেখতেন তিনি। ক্যাশম্যান মনে করেন, লেটারম্যানের বুদ্ধিমত্তা এবং হাস্যরসবোধ তাকে ছোটবেলা থেকেই মুগ্ধ করত।
লেটারম্যানের অনুষ্ঠানগুলো দেখেই তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন এবং তার মত একজন হোস্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।
বর্তমানে ৪৭ বছর বয়সী, দুই সন্তানের জনক ড্যান ক্যাশম্যান, পেশাগত জীবনে একজন জনসংযোগ পরিচালক। তবে, ১৫ বছর ধরে তিনি “দ্য নাইট শো উইথ ড্যানি ক্যাশম্যান” নামের একটি সাপ্তাহিক টক শো হোস্ট করে আসছেন।
এই অনুষ্ঠানটি মূলত লেটারম্যানের শোয়ের আদলে তৈরি করা হয়েছে। যেখানে একটি স্টুডিও অডিয়েন্স, লাইভ ব্যান্ড এবং সেলিব্রেটি অতিথিদের নিয়ে অনুষ্ঠানটি সাজানো হতো।
স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের অনেক তারকা এই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে এসেছেন।
ক্যাশম্যানের শোটি মেইনের শীর্ষ তিনটি টিভি বাজারে প্রচারিত হয় এবং বর্তমানে এটিই সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র স্থানীয়ভাবে তৈরি হওয়া, রাতের বেলার টক শো।
তবে পারিবারিক ব্যস্ততা, অফিসের কাজ এবং একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে, ক্যাশম্যান তার শো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন।
গত বছর তিনি ঘোষণা করেন যে, ২০২৩ সালের বসন্তে তার শোয়ের শেষ পর্ব ধারণ করা হবে। ক্যাশম্যান জানান, যদিও তিনি জানতেন যে, এবার শো বন্ধ করার সময় হয়েছে, তবুও বিষয়টি তার জন্য কিছুটা কষ্টের ছিল।
অনুষ্ঠান বন্ধ করার সিদ্ধান্তের পর, ক্যাশম্যানের সবচেয়ে বড় ইচ্ছা ছিল, তার শেষ পর্বে ডেভিড লেটারম্যানকে অতিথি হিসেবে পাওয়া।
তিনি তার একজন সহকর্মীর মাধ্যমে লেটারম্যানের টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং লেটারম্যানকে উদ্দেশ্য করে একটি আবেগপূর্ণ চিঠি লেখেন। চিঠিতে তিনি লেটারম্যানের প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধার কথা জানান এবং কীভাবে একটি প্রিয় অনুষ্ঠান শেষ করা যায়, সেই বিষয়ে তার পরামর্শ চান।
কারণ, লেটারম্যানও একই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন।
মার্চ মাসে ক্যাশম্যান জানতে পারেন যে, লেটারম্যান তার শেষ পর্বে অতিথি হতে রাজি হয়েছেন। ক্যাশম্যান জানান, অনুষ্ঠানটি ধারণ করার আগে তিনি ভীষণ উত্তেজিত ছিলেন।
তার ভাষায়, “আমার পেটে যেন হাজারো প্রজাপতি একসঙ্গে উড়ছিল”।
গত ২৩শে এপ্রিল, ৪৭০ জন দর্শকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি ধারণ করা হয়। দর্শকদের মধ্যে খুব কম জনই জানতেন যে, লেটারম্যান অনুষ্ঠানে আসছেন।
যখন লেটারম্যান মঞ্চে উঠেন, দর্শকদের মধ্যে এক অভূতপূর্ব আনন্দের সৃষ্টি হয়। ক্যাশম্যান বলেন, “অনুষ্ঠানে তাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর, ব্যাকস্টেজ থেকে তার থিম সং বাজতে শুরু করলে, সেখানকার পরিবেশ ছিল অসাধারণ… যা আমি আগে কখনো অনুভব করিনি।
এটি ছিল অত্যন্ত আবেগপূর্ণ, শুধু আমার জন্য নয়, উপস্থিত সবার জন্যই।”
ক্যাশম্যান জানান, লেটারম্যানের সঙ্গে তার আগে কখনো দেখা হয়নি। কিন্তু যখন তিনি মঞ্চে উঠলেন, ক্যাশম্যানের সঙ্গে হাত মেলালেন এবং তার অনুষ্ঠানে আসার জন্য ধন্যবাদ জানালেন, তখন ক্যাশম্যানের মনে হয়েছিল যেন তার জীবনের সব স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
ক্যাশম্যান আরও বলেন, লেটারম্যান ছিলেন অত্যন্ত মিশুক, আকর্ষণীয়, হাসিখুশি এবং বুদ্ধিমান। তিনি প্রায় ৩৩ বছর ধরে টিভিতে যেমন ছিলেন, আজও তেমনই আছেন।
অনুষ্ঠানে লেটারম্যান একটি নেভি ব্লু স্যুট পরে এসেছিলেন, পরে তিনি একটি সবুজ হুসন ঈগলস সোয়েটশার্ট পরেছিলেন।
অনুষ্ঠানে লেটারম্যান “বাংগোর” (BANG-gor, bang কথাটির উপর জোর দিয়ে) -এর সঠিক উচ্চারণ নিয়ে মজা করেন এবং কীভাবে শহরটির এই নামকরণ করা হয়েছে, সেই গল্পটি শোনান, যা ক্যাশম্যানের অজানা ছিল।
এছাড়াও, স্থানীয় একটি নাইট শো দীর্ঘদিন ধরে সাফল্যের সঙ্গে চলার জন্য তিনি ক্যাশম্যানের প্রশংসা করেন।
ক্যাশম্যান বলেন, “লেটারম্যান ছিলেন খুবই ভালো মনের মানুষ এবং তার এই উপস্থিতি আমার শো বন্ধ করার কষ্ট অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে।
তিনি যেন আমাকে উৎসাহ জুগিয়ে গেলেন। ১৯৮৭ সাল থেকে যাকে আমি আদর্শ হিসেবে মেনে এসেছি, তার কাছ থেকে এমন সম্মান পাওয়াটা আমার কল্পনারও বাইরে ছিল।”
তথ্য সূত্র: পিপল