১১ বছরের শিশুকে খুন: ‘যন্ত্রণা’ থেকে মুক্তি দিতেই এমন কাজ!

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের উপকণ্ঠে ১৯৬৪ সালে সংঘটিত একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আজও মানুষের মনে গভীর রেখাপাত করে। ১১ বছর বয়সী বালক লুক তারোঁর মর্মান্তিক মৃত্যুরহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে হতবাক হয়েছিলেন তদন্তকারীরা।

ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পর, খুনি পুলিশের পাশাপাশি নিহত বালকের পরিবারকে চিঠি লিখে উপহাস করতে শুরু করে, যা “গলাবন্ধক (l’Etrangleur)” নামে পরিচিত ছিল।

১৯৬৪ সালের ২৬শে মে, লুক তারোঁর মা’র সাথে ১৫ ফ্রাঙ্ক নিয়ে ঝগড়া হয়। এরপর সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।

ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে উদ্বিগ্ন বাবা-মা’র আশঙ্কা সত্যি করে পরের দিন সকালে ভেরিয়ের-লে-বুইসোঁ জঙ্গলে লুকের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়।

এরপরই শুরু হয় আসল বিভীষিকা। খুনি, যে নিজেকে ‘গলাবন্ধক’ নামে পরিচয় দিত, সে পুলিশ, গণমাধ্যম এবং লুকের শোকাহত বাবা-মাকে বিদ্রূপ করে চিঠি পাঠাতে থাকে।

প্রতিটি চিঠিতে থাকত নির্মমতার ছাপ। তদন্তকারীরা প্রথমে হতভম্ব হয়ে যান, কারণ খুনি অত্যন্ত ধূর্ততার সাথে নিজের পরিচয় গোপন রাখছিল।

তদন্তের এক পর্যায়ে, ২৭ বছর বয়সী লুসিয়েন লেজার নামক এক নার্সিং ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে প্রথমে হত্যার কথা স্বীকার করে। এমনকি, সে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, “আমিই তো সেই নরঘাতক!”

পুলিশের ধারণা ছিল, লেজার আরও কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকতে পারে, তবে তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তবে, পরবর্তীতে লেজার তার স্বীকারোক্তি অস্বীকার করে।

তার দাবি ছিল, সে শুধু কয়েকটি চিঠি লিখেছিল এবং ঘটনার রাতে তার স্মৃতি বিভ্রাট হয়েছিল।

১৯৬৬ সালে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং দীর্ঘ কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।

প্রায় ৪০ বছর কারাভোগের পর, ২০০৫ সালে লেজারকে মুক্তি দেওয়া হয়।

মুক্তি পাওয়ার তিন বছর পর ২০০৮ সালে তিনি নিজ বাসভবনে মারা যান।

লেজারের বিচার প্রক্রিয়া এবং তার মানসিক অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিতর্ক হয়েছে।

অনেকেই মনে করেন, তিনি আসলে একজন অসুস্থ মানুষ ছিলেন যিনি সমাজের প্রতি বিদ্বেষ থেকে এমন ঘৃণ্য কাজ করেছেন।

এই ঘটনার পর প্যারিসের মানুষজন বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটিয়েছিলেন।

লেজারের বিচারের রায় এবং ঘটনার বিবরণ আজও ফ্রান্সে বেশ আলোচিত।

মানুষ জানতে চায়, কেন একজন মানুষ এমন নৃশংস হতে পারে? কেন সে একটি শিশুকে হত্যা করে উপহাস করতে পারলো?

লেজারের এই ধরনের আচরণের পেছনে মনোবৈজ্ঞানিক কারণগুলো কী ছিল, তা নিয়েও চলে বিস্তর আলোচনা।

তথ্য সূত্র: পিপলস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *