যুদ্ধবিরতির ঘোষণা, তবুও কেন কাশ্মীর জুড়ে আতঙ্ক?

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা কমাতে অবশেষে যুদ্ধবিরতি!

জম্মু ও কাশ্মীর সীমান্তে কয়েক দিন ধরে চলা তীব্র গোলাগুলির পর অবশেষে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। শনিবার ভারতীয় সময় বিকেল ৫টা থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

উভয় দেশের সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনার পরেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর ফলে, স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে দুই দেশের মধ্যে সকল ধরনের সামরিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

যুদ্ধবিরতি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরেই ভারতীয় নিয়ন্ত্রিত শ্রীনগরে কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এক্সে (সাবেক টুইটার) লেখেন, “যুদ্ধবিরতির কি হলো? শ্রীনগরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে।”

পাকিস্তানের লাহোর থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক ওসামা বিন জাভেদ জানান, “কাশ্মীর অঞ্চলে যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানালেও, আমরা এর অস্থিরতা সম্পর্কে অবগত আছি। নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি)-তে ইতিমধ্যেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে।”

তিনি আরও জানান স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, কাশ্মীর অঞ্চলের একাধিক স্থানে গোলাগুলি হয়েছে এবং কিছু বিস্ফোরক পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছে।

শ্রীনগরে অবস্থান করা সাংবাদিক উমর মেহরাজ আল জাজিরাকে বলেন, “আমি আকাশে বিস্ফোরক দেখতে পাচ্ছি। এগুলো ক্ষেপণাস্ত্র নাকি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, তা স্পষ্ট নয়। বারামুল্লা এবং জম্মুতেও একই ধরনের বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে।”

বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।

এই যুদ্ধবিরতি তৈরিতে আন্তর্জাতিক মহলের ভূমিকা ছিল বলে জানা গেছে। তবে কোন কোন দেশ মধ্যস্থতা করেছে, তা নিয়ে এখনো বিভিন্ন মত শোনা যাচ্ছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিবৃতিতে জানান, যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার মাধ্যমে এই যুদ্ধবিরতি ঘটাতে সাহায্য করেছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ইসহাক দার জানান, প্রায় তিন ডজনের বেশি দেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ এই যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়েছে।

যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর কাশ্মীর সীমান্তের উভয় পাশে বসবাসকারী মানুষজন স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। শ্রীনগরের বাসিন্দা, যিনি আগামী সপ্তাহে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছেন, এমন এক তরুণী আল জাজিরাকে বলেন, “এত জীবনহানির পর, এটি একটি বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। আমরা শান্তি চাই এবং এই সহিংসতা বন্ধ করতে চাই।”

জম্মু-কাশ্মীরের একটি ভ্রমণ সংস্থার পরিচালক ফিরদৌস আহমদ শেখ জানান, দুই দেশের মধ্যে কাশ্মীরকে “যুদ্ধক্ষেত্র” বানানোর কারণে তিনি হতাশ।

তিনি বলেন, “আমার একমাত্র ভয় হলো, ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আবার খারাপ হতে পারে। এই দেশগুলোর উচিত একসঙ্গে বসে কাশ্মীরের রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করা। আমি প্রার্থনা করি, আমাদের শিশুদের এমন দিন দেখতে না হোক।”

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে বাসিন্দারা যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা আশা করছেন, এর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের সংঘাত থেকে মুক্তি মিলবে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *