আলবেনিয়ায় অনুষ্ঠিত হলো সাধারণ নির্বাচন, চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লক্ষ্যে ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন এডি রামা।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) অন্তর্ভুক্তির প্রতিশ্রুতি এবং দুর্নীতির অভিযোগের মধ্যে দেশটির নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেছে। রোববার সকাল সাতটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে চলে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত।
নির্বাচনের ফলাফল সোমবার ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
প্রায় ৩৭ লক্ষ আলবেনীয় নাগরিক, যাদের মধ্যে কয়েক লক্ষ দেশের বাইরে বসবাস করেন, এই নির্বাচনে ভোট দেওয়ার যোগ্য ছিলেন।
প্রথমবারের মতো, প্রবাসীরা ডাকযোগে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এডি রামা, যিনি ২০১৩ সাল থেকে ক্ষমতাসীন সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রধান, নিজেকে আলবেনিয়ার ইইউ-এর ভবিষ্যৎ রূপকার হিসেবে তুলে ধরেছেন।
তিনি ২০৩০ সালের মধ্যে আলবেনিয়াকে ইইউ-এর সদস্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
নির্বাচনের শেষ প্রচারণায় তিনি বলেন, “আমরা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করব এবং ইইউ-তে আলবেনিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করতে একটি দিনও নষ্ট হতে দেব না।”
অন্যদিকে, রামের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, ৮০ বছর বয়সী সালি বেরিশা।
দুর্নীতির অভিযোগে বেরিশার যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
যদিও তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, তবুও তিনি এখনো ব্যাপক জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন।
তিনি ‘মেক আলবেনিয়া গ্রেট এগেইন’ স্লোগান ব্যবহার করেছেন।
বিরোধী দলগুলো অভিযোগ করেছে যে, রামা সরকারের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রবণতা রয়েছে, যা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিপন্থী।
সমালোচকরা বলছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর রামের নিয়ন্ত্রণ গণতন্ত্রের পথে বাধা সৃষ্টি করছে।
এমনকি তিরানার মেয়র এরিয়ন ভেলিয়াজকেও দুর্নীতির অভিযোগে এ বছর গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
যদিও রামা ও ভেলিয়াজ দুজনেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবারের নির্বাচন অনেকটা পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে লড়াইয়ের মঞ্চ।
১৯৯০ সালে সমাজতন্ত্র পতনের পর থেকে রামা ও বেরিশা উভয়ই আলবেনিয়ার রাজনীতিতে প্রভাবশালী ভূমিকা রেখেছেন।
তবে অনেক তরুণ ভোটার উভয় নেতার প্রতিই হতাশ।
২১ বছর বয়সী আরবার কিয়াজিমির ভাষ্যমতে, “আমি নতুন রাজনীতিবিদদের ভোট দেব, কারণ রামা ও বেরিশার মতো নেতারা গত তিন দশক ধরে ক্ষমতায় আছেন এবং তারা কেবল নিজেদের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগি করেন।”
অন্যদিকে, এরিসা নামের এক অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রী ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকার পরিকল্পনা করছেন।
তিনি বলেন, “আমি শুধু দেশ ছেড়ে বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করার এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে থাকার কথা ভাবছি।”
গত এক দশকে প্রায় ১০ লক্ষ আলবেনীয় দেশ ছেড়েছেন, তাদের অনেকেরই একই ধরনের মনোভাব।
সোশ্যালিস্ট পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে ছোট দলগুলোর সমর্থন প্রয়োজন হতে পারে, যা পরবর্তী সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
নির্বাচনের প্রচার মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চললেও, অনলাইনে হয়রানি ও উস্কানির কারণে টিকটক-এর এক বছরের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে।
ডেমোক্রেটিক পার্টি তাদের প্রচারণা জোরদার করতে মার্কিন রাজনৈতিক কৌশলবিদ ক্রিস লাসিভিটাকে নিয়োগ করেছে, যিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় কাজ করেছেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা