চরম ব্যস্ততায় ২ জন মা: কাজ, সন্তান, আর নিজের জন্য সময়!

কর্মজীবী মায়েদের এক অবিরাম সংগ্রাম: কাজ, পরিবার আর আত্ম-পরিচর্যার এক ঝলক।

আজকের যুগে, কর্মজীবী মায়েদের জীবন যেন এক যুদ্ধক্ষেত্র। একদিকে সংসারের দায়িত্ব, অন্যদিকে অফিসের চাপ—সবকিছু সামলে তারা এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। সন্তানদের মানুষ করা, সংসারের খরচ যোগানো—এসব করতে গিয়ে অনেক সময় নিজের যত্ন নেওয়ার ফুরসতটুকুও তাদের থাকে না।

তবে এই কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও কিছু নারী আছেন, যারা সাহস আর দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে চলছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সিন্ডি ডিওনিসিও এমনই একজন। ২৬ বছর বয়সী সিন্ডি, যিনি ডেলাওয়্যারে বসবাস করেন, এক সন্তানের মা। বাড়ি কেনার স্বপ্ন তার চোখে, আর সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য তিনি দিনরাত পরিশ্রম করেন।

সিন্ডি একই সাথে দুটি চাকরি করেন এবং নিজের একটি ক্লিনিং ব্যবসাও চালান। ভোর ৪টায় তার একটি কাজ শুরু হয়, এরপর ডেন্টাল অফিসে রিসেপশনিস্টের দায়িত্ব পালন করেন। বৃহস্পতিবারগুলো তার জন্য সবচেয়ে ব্যস্ত দিন, কারণ সেদিন তিনি ক্লিনিংয়ের কাজও করেন।

সিন্ডির স্বামী তাকে সব কাজে সহযোগিতা করেন। তিনি সিন্ডির কাজের সময়টুকুতে সন্তানের দেখাশোনা করেন, রাতের খাবার তৈরি করেন এবং পড়াশোনার তদারকি করেন। সিন্ডি বলেন, “আমার স্বামী খুবই সহযোগী। আমরা দু’জনে মিলেই সময়টা ভাগ করে নিই, যাতে সন্তানের জন্য সময় বের করতে পারি।”

অন্যদিকে, পেনসিলভানিয়ার অ্যাশলি জোনস-এর গল্পটা একটু ভিন্ন। ৩৬ বছর বয়সী অ্যাশলি একজন হাই স্কুল শিক্ষক এবং পার্টটাইম ওয়েট্রেস।

তার সাত সন্তান রয়েছে, যাদের মধ্যে তিনজন তার স্বামীর আগের পক্ষের। অ্যাশলির দিন শুরু হয় সকাল ৬:৩০ মিনিটে, স্কুলের উদ্দেশ্যে এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে। স্কুল থেকে ফিরে এসে রাতের খাবার তৈরি, সন্তানদের পড়াশোনা এবং অন্যান্য কাজ—এসবের মাঝে অ্যাশলিকে সময় কাটাতে হয়।

অ্যাশলির স্বামী সাধারণত রান্নার কাজটি করেন। “আমাদের ছেলেমেয়েরা সবাই খুব সক্রিয়… নাচ, কারাতে, ফুটবল, ট্র্যাক, বেসবল—এসব তো আছেই,” অ্যাশলি জানান।

অ্যাশলি জানান, তিনি ১৮ বছর বয়স থেকে ওয়েট্রেসের কাজ করছেন। ২০১৩ সালে তার স্বামী রেস্টুরেন্ট ম্যানেজমেন্টের চাকরি ছাড়ার পর তিনি আবার এই পেশায় ফিরে আসেন। “আমাদের একটি বড় পরিবার, তাই বাড়তি আয়ের প্রয়োজন ছিল,” তিনি বলেন।

অ্যাশলি সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন এবং শুক্রবার ও শনিবার রাতে ওয়েট্রেসের কাজ করেন। স্কুলের ছুটিতে তিনি অতিরিক্ত শিফটও করেন।

কাজের চাপ সত্ত্বেও অ্যাশলি তার সন্তানদের জন্য সময় বের করেন। তিনি বলেন, “আমি আমার সন্তানদের সাথে অনেক সময় কাটাই। শুক্রবার আমি ১৭ ঘণ্টা কাজ করি। তবে আমার বাচ্চারা সবাই স্কুলে যায়। সুতরাং, আমি যখন পড়াচ্ছি, তারা তখন পড়াশোনা করছে।”

অ্যাশলি এবং সিন্ডি—দুজনেই তাদের পরিবারের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। তারা জানেন, তাদের এই ত্যাগ তাদের সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে।

সিন্ডি চান, ভবিষ্যতে তিনি হয়তো একটি কাজ করবেন অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুরোদমে কাজ করবেন এবং একজন “মা” হিসেবে পরিচিত হবেন।

অ্যাশলি চান, যতদিন দুটো কাজ করে তাদের পরিবারের ভরণপোষণ সম্ভব, ততদিন তিনি এই কাজগুলো চালিয়ে যাবেন।

কর্মজীবী মায়েদের এই গল্পগুলো আমাদের সমাজে অনেক নারীর প্রতিচ্ছবি। তারা তাদের পরিবারের জন্য নিবেদিত প্রাণ, এবং তাদের আত্মত্যাগ সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *