মিথ্যা সাক্ষী, বছরের পর বছর জেল! দুই বন্ধুর চোখে জল আনা লড়াই

শিরোনাম: বাইশ বছর কারাবাসের পর মুক্তি, ভুলের মাশুল দিতে বন্ধুর সাথে লড়ছেন এক আমেরিকান।

লুইজিয়ানার (Louisiana) এক আদালত কক্ষে সাজা ঘোষণার সময় জরমেইন হাডসন নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির জীবন যেন থমকে গিয়েছিল। ১৯৯৯ সালে ববি গাম্পরাইট নামের এক শ্বেতাঙ্গ যুবক মিথ্যা অভিযোগ করেন যে জরমেইন তাকে বন্দুক দেখিয়ে ডাকাতি করেছেন।

সেই অভিযোগের ভিত্তিতে হওয়া মামলায়, জুরি বোর্ডের কয়েকজন সদস্যের ভিন্ন মত সত্ত্বেও, আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ৯৯ বছরের কারাদণ্ড দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রে, গুরুতর অপরাধের মামলাগুলোতে সাধারণ নাগরিকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি জুরি বোর্ডের মাধ্যমে রায় দেওয়া হয়। কিন্তু সে সময়ে, লুইজিয়ানায় এমন একটি আইন ছিল যা ‘স্প্লিট জুরি’ নামে পরিচিত ছিল।

এই আইনে, জুরি বোর্ডের সব সদস্যের ঐকমত্যের প্রয়োজন হত না, বরং কিছু সদস্যের ভিন্ন মত থাকলেও রায় দেওয়া যেত। এই আইনের সুযোগে জরমেইনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

এই ধরনের আইন, যা একসময় বর্ণবাদী ‘জিম ক্র’ আইনের অংশ ছিল, কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার হরণের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল।

কারাগারে দীর্ঘ বাইশ বছর বন্দী থাকার পর, জরমেইন তার জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হারিয়েছেন। তিনি তার দ্বিতীয় মেয়ের জন্ম, অন্যান্য স্বজনদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও উপস্থিত থাকতে পারেননি।

তিনি সবসময় ববি গাম্পরাইটের মুখ থেকে সত্য শোনার অপেক্ষা করতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, একদিন ববি তার মিথ্যা স্বীকার করবেন।

অন্যদিকে, ববি গাম্পরাইট, যিনি মাদকাসক্ত ছিলেন, সবসময় নিজের অপরাধবোধে জর্জরিত থাকতেন। তিনি যেন নিজেকেই নিজে ধ্বংস করে দিচ্ছিলেন।

অবশেষে, তিনি তার ভুল স্বীকার করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি পুলিশের কাছে গিয়ে জরমেইনের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা অভিযোগের কথা জানান।

২০২১ সালে, জরমেইন মুক্তি পান। মুক্তির কয়েক মাস পরেই, ববি গাম্পরাইট তাকে ফোন করেন। তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের জমে থাকা ভুল বোঝাবুঝি, ঘৃণা, সব যেন নিমেষেই দূর হয়ে যায়।

আজ, এই দুই বন্ধু—জরমেইন এবং ববি—তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে লুইজিয়ানার আইন পরিবর্তনের জন্য কাজ করছেন। তাদের প্রধান লক্ষ্য হল, ‘স্প্লিট জুরি’ ব্যবস্থার শিকার হওয়া অন্যদের সুবিচার নিশ্চিত করা।

তাদের এই লড়াই এখনও চলছে, এবং তারা আশা করছেন, একদিন তারা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবেন। তাদের এই যাত্রা প্রমাণ করে, মানুষের ভুল শুধরানোর এবং বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপনের কোনো বয়স নেই।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *