ইংরেজি ভাষা কি সত্যিই একদিন মরে যাবে?

ভাষা পরিবর্তনশীল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর রূপান্তর ঘটে। কোনো ভাষাই চিরস্থায়ী নয়। ইংরেজি ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়েও তাই প্রশ্ন উঠছে, যদিও বর্তমানে এর বিশ্বজোড়া প্রভাব রয়েছে।

কিছু ভাষাবিদ মনে করেন, এই শতাব্দীর শেষে প্রায় ১,৫০০ ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে, যা পৃথিবীর মোট ভাষার এক-চতুর্থাংশ। এই পরিস্থিতিতে, ইংরেজি ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করাটা হয়তো অনেকের কাছে গুরুত্বহীন মনে হতে পারে।

তবে, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, কোনো ভাষাই তার প্রভাব চিরকাল ধরে রাখতে পারেনি। একসময় রোমান বা মিশরের সাম্রাজ্যের অধিবাসীরা হয়তো ভেবেছিলেন তাদের ভাষা, যেমন লাতিন বা মিশরীয়, চিরকাল টিকে থাকবে।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে তাদের সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। লাতিন ভাষার বিবর্তন ঘটেছে, যা পরবর্তীতে রোমান সাম্রাজ্যের অধিবাসীদের কাছেও দুর্বোধ্য হয়ে উঠেছিল। জার্মানির লাইপজিগে অবস্থিত ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ইভোলিউশনারি অ্যানথ্রোপলজির ভাষাবিদ মার্টিন হ্যাসপেলম্যাথের মতে, “ইংরেজি ভাষারও বিলুপ্তি ঘটতে পারে, যেমনটা মিশরীয় ভাষার ক্ষেত্রে ঘটেছিল।”

তাহলে প্রশ্ন হলো, কখন এবং কীভাবে?

ভাষা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অভিবাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আন্তর্জাতিক অভিবাসন বাড়লে ভাষার পরিবর্তনও দ্রুত হবে।

প্রযুক্তির অগ্রগতিও ভাষার উপর প্রভাব ফেলে, যদিও কখনো কখনো এই দুটি বিষয় একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, বর্তমানে ইংরেজি ভাষার বিভিন্ন আঞ্চলিক রূপ বিদ্যমান।

এই রূপগুলোকে একটি সাধারণ লিখিত রূপ এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে ধরে রাখা হয়েছে। তবে, পরিস্থিতি সব সময় একই রকম থাকে না।

কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনার কারণেও ভাষার পরিবর্তন হতে পারে, যাকে ‘ব্ল্যাক সোয়ান ইভেন্ট’ বলা হয়। যেমন, মিশরীয় ভাষা গ্রিক, রোমান এবং খ্রিস্টানদের আগমনকে হয়তো টিকে ছিল, কিন্তু সপ্তম শতকে আরবি ও ইসলামের প্রভাবে এটি দুর্বল হয়ে পরে।

ইংরেজি ভাষার ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি চীন, আমেরিকার স্থান দখল করে, অথবা ভারত যদি তাদের সরকারি ভাষা হিসেবে ইংরেজির ব্যবহার কমিয়ে দেয়, তাহলে হয়তো বিশ্বজুড়ে ইংরেজির প্রভাব কমতে পারে।

এমনকি, আফ্রিকার লিঙ্গুয়্যা ফ্রাঙ্কা, যেমন – লিঙ্গালা ও সোয়াহিলি, অথবা আমেরিকার স্প্যানিশ ভাষার বিস্তার ঘটলে ইংরেজির স্থান পরিবর্তন হতে পারে।

হ্যাসপেলম্যাথের মতে, “১০০ বছর পর পৃথিবী হয়তো অনেক বদলে যাবে।”

তবে, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে সম্ভবত ইংরেজি ভাষা টিকে থাকবে। এখানে দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ – ইংরেজির প্রভাব কতটা কমবে, এবং এর অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনগুলো কেমন হবে।

বর্তমানে, নাইজেরিয়ান এবং ভারতীয়দের মতো ইংরেজি ভাষাভাষীদের সংখ্যা বাড়ছে। ভাষার শব্দভাণ্ডার দ্রুত পরিবর্তিত হয়। উচ্চারণে ভিন্নতা বা ব্যাকরণের পরিবর্তন ভাষার বিবর্তনকে প্রভাবিত করে।

হয়তো ৫০ বছরের মধ্যে, নিউইয়র্ক বা লন্ডনের মানুষেরা তাদের ভাষায় ‘অগোগোরু’ শব্দ ব্যবহার করবে, যা নাইজেরিয়ান ভাষায় ব্যবহৃত একটি শব্দ।

অন্যদিকে, অভিবাসন এবং প্রযুক্তির কারণে ইংরেজির ওপর কেমন প্রভাব পড়বে, তা বলা কঠিন। ভাষার পরিবর্তন সবসময়ই ঘটছে।

তবে, ইংরেজি-ভাষী দেশগুলোতে, বিশেষ করে ব্রিটেন এবং উত্তর আমেরিকায়, অন্য ভাষাভাষীদের আগমন বাড়লে ভাষার পরিবর্তন আরও দ্রুত হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে হয়তো নতুন একটি ভাষার জন্ম হবে, যাকে ‘উত্তর-আধুনিক ইংরেজি’ বলা যেতে পারে।

তবে, অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তন অথবা উন্নত অনুবাদ প্রযুক্তির কারণেও ভাষার পরিবর্তন প্রভাবিত হতে পারে।

ভাষাবিদরা মনে করেন, ইংরেজি ভাষার পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। লাতিন এবং মিশরীয় ভাষা যেখানে ২,০০০ বছরের বেশি সময় ধরে টিকে ছিল, সেখানে ইংরেজি ভাষার বয়স প্রায় ১,৫০০ বছর।

বর্তমানে এর প্রভাব অনেক বেশি মনে হলেও, এর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *