ভালোবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন স্যাম এবং এলেন স্পর্ন নামের এক মার্কিন দম্পতি। তাদের ভালোবাসার গভীরতা যেন সময়ের সাথে সাথে আরও বেড়েছে।
৭ দশক ধরে, অর্থাৎ ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে, তারা একসঙ্গে অপেরা উপভোগ করেছেন। কিন্তু জীবনের এই পর্যায়ে এসে, তাদের ভালোবাসার গল্পে নতুন মোড় এসেছে।
৯৪ বছর বয়সী স্যামের দৃষ্টিশক্তির অবনতি হওয়ায়, এখন আর আগের মতো অপেরা হলে যেতে পারেন না। চোখের সমস্যার কারণে তিনি মঞ্চের পরিবেশ উপভোগ করতে পারেন না, এমনকি সাবটাইটেলও পড়তে পারেন না।
তবে, এতে তাদের ভালোবাসার গভীরতা এতটুকুও কমেনি। ৯১ বছর বয়সী এলেন এখনো অপেরায় যান, কিন্তু স্যামের সেখানে যাওয়া হয় না।
তাদের এই পরিবর্তনের মধ্যেও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটেছে অন্যভাবে। এলেন অপেরা থেকে ফিরে আসার পর, স্যাম আগ্রহ নিয়ে শোনেন এবং তাদের ভালো লাগা-মন্দ লাগা নিয়ে আলোচনা করেন।
অপেরার প্রতি তাদের এই ভালোবাসাই তাদের দাম্পত্য জীবনকে আজও সতেজ রেখেছে। স্যাম বলেন, “এলেন সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগী ছিলেন, পিয়ানো বাজাতেন। আমরা যখন প্রথম পার্ক স্লোপে থাকতে শুরু করি, তখন থেকেই অপেরার সদস্য ছিলাম।
একসঙ্গে অনেক অপেরা উপভোগ করেছি, যা আমাদের আনন্দ দিতো।
মেট্রোপলিটন অপেরা এবং ব্রুকলিন একাডেমি অফ মিউজিকের অনুষ্ঠানে তারা নিয়মিত যেতেন, যার পেছনে এলেনের অবদান ছিল অনেক।
ছোটবেলায় এলেন তার পরিবারের সঙ্গে অপেরায় যেতেন এবং পরে স্যামকে এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। স্যাম জানান, “আমি এটিকে খুব ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছিলাম, কারণ এলেন এটি ভালোবাসতেন, আর আমি তাকে ভালোবাসি।
আমি অপেরা শুনতে এবং বুঝতে চেয়েছিলাম।
তাদের ভালোবাসার গভীরতা এতটাই যে, প্রতিটি অপেরার পর তারা আলোচনায় বসতেন, যেখানে ভালো লাগা এবং খারাপ লাগা নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে মত বিনিময় করতেন।
স্যাম পেশায় একজন সফল আইনজীবী ছিলেন, কিন্তু স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার কারণে অপেরা নিয়ে আলোচনা করতে তিনি কখনোই ক্লান্ত হননি।
এলেনের বাবা-মা ছিলেন রোমানিয়া থেকে আসা অভিবাসী, যারা ব্রুকলিনে থাকতেন। তারা দুজনেই নিউইয়র্কের সংস্কৃতিকে সমর্থন করতেন।
ছোটবেলা থেকেই এলেন অপেরা, থিয়েটার এবং ক্লাসিক্যাল মিউজিকের সঙ্গে পরিচিত হন। স্যাম বলেন, “এলেনের বাবা-মার মৃত্যুর পরও আমরা অপেরায় যাওয়া অব্যাহত রেখেছি, সঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা বাঁচিয়ে রেখেছি।
দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতার কারণে স্যাম এখন আর সরাসরি অপেরা উপভোগ করতে পারেন না, কিন্তু এলেন ফিরে আসার পরে তার উচ্ছ্বাস দেখার মতো।
“আমি খুবই আনন্দিত হই, কারণ এলেন শুধু দেখেইনি, বরং শুনেছে, উপভোগ করেছে, সঙ্গীতের মাধুর্য অনুভব করেছে। আমি এটা ভালোবাসি।”
তাদের এই ভালোবাসার গল্পে অনুপ্রাণিত স্যামের নাতনি স্যামি কর্ডেরো। তিনি বলেন, “আমার দাদা-দাদি সব সময় একে অপরের প্রতি সহযোগী ছিলেন। তারা একে অপরের যত্ন নেন এবং সবসময় পাশে থাকেন। আমি এমন সম্পর্কই পেতে চাই।
ভালোবাসা সম্পর্কে স্যামের ধারণা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ভালোবাসা মানে সম্পূর্ণ উৎসর্গ।” তাদের ৭ দশকের দাম্পত্য জীবনে, অপেরার প্রতি তাদের ভালোবাসা এবং একে অপরের প্রতি উৎসর্গীকৃত জীবন সত্যিই অনুকরণীয়।
তথ্য সূত্র: পিপল