ডোনাল্ড ট্রাম্প, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, আবার ওষুধের দাম কমানোর উদ্দেশ্যে একটি নির্বাহী আদেশ জারির ঘোষণা করেছেন। এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো, বিভিন্ন ঔষধের দাম অন্য দেশগুলোতে, বিশেষ করে যেখানে দাম সবচেয়ে কম, তার সমান করা।
এই পদক্ষেপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রবিবার ট্রাম্পের দেওয়া এক বিবৃতিতে জানা যায়, তিনি সম্ভবত সোমবার সকালে এই সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করবেন।
তাঁর মতে, এই পদক্ষেপের ফলে প্রেসক্রিপশনযুক্ত ওষুধের দাম ৩০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পাবে। তিনি ‘মোস্ট ফেভার্ড নেশন’ নীতি গ্রহণের কথা উল্লেখ করেছেন।
এই নীতির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের যে দেশে ওষুধের দাম সবচেয়ে কম, সেই একই দামে ওষুধ কিনতে পারবে। আগের মেয়াদেও ট্রাম্প এই ধরনের একটি নীতি চালু করতে চেয়েছিলেন, তবে তা আদালতের বাধার সম্মুখীন হয় এবং পরে বাতিল হয়ে যায়।
সেই সময়ে, এই নীতিটি মূলত ডাক্তারদের চেম্বারে সরবরাহ করা কিছু ওষুধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হওয়ার কথা ছিল। তবে নতুন এই আদেশের আওতায় কোন কোন ওষুধ ও মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে এটি কার্যকর হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের পদক্ষেপের ফলে একদিকে যেমন ঔষধের দাম কমে আসতে পারে, তেমনই রোগীদের জন্য ঔষধের সহজলভ্যতা কমে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে, নীতিটির বিস্তারিত রূপরেখার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।
ওষুধের দাম কমানোর বিষয়টি ট্রাম্পের আগের মেয়াদের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি ছিল। যদিও এই মেয়াদে তিনি এই বিষয়ে ততটা মনোযোগ দেননি।
এমনকি তাঁর প্রচার শিবির গত বছর জানিয়েছিল, তিনি ‘মোস্ট ফেভার্ড নেশন’ মডেল থেকে সরে এসেছেন, কারণ অনেক রিপাবলিকান এই নীতির ঘোর বিরোধী।
তবে সম্প্রতি, প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকানদের প্রস্তাবিত কর ও ব্যয়ের কাটছাঁটের অংশ হিসেবে মেডিকেডের জন্য ব্যয় কমানোর একটি উপায় হিসেবে এই ধারণাটি আবার সামনে আনা হয়েছে। যদিও এই প্রস্তাবটি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
এই পদক্ষেপ সম্ভবত ঔষধ শিল্পের তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হবে, যেমনটা আগে হয়েছিল। কারণ ঔষধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলো এই ধরনের নীতির বিরোধিতা করে থাকে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন মেডিকেয়ারের ওষুধের দাম অন্যান্য দেশের দামের সঙ্গে সমন্বয় করার ধারণাটি প্রথম উত্থাপন করে এবং ২০২০ সালের নির্বাচনের পরপরই এটি চূড়ান্ত করা হয়।
এই সাত বছর মেয়াদি মডেলের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ওষুধের দাম কমাতে পারতো, কারণ এই দেশগুলোতে সরকার প্রায়ই ওষুধের দাম নির্ধারণ করে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ‘মোস্ট ফেভার্ড নেশন’ প্রস্তাবের ফলে রোগীদের ওষুধ বাবদ খরচ এবং স্বাস্থ্য বীমার প্রিমিয়ামের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, ওষুধের দাম কমলে এই দুটি ক্ষেত্রেই সাশ্রয় হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ওষুধের দামে প্রভাব পড়তে পারে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও ঔষধের সহজলভ্যতা ও মূল্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতেও ঔষধের দাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন