ফরাসি সংস্কৃতিতে কানকান নাচের উদ্ভব, যা এক সময়ের শ্রমিক শ্রেণির আনন্দ থেকে কীভাবে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করলো, সেই নাচের এক বিচিত্র ইতিহাস রয়েছে। উনিশ শতকের প্যারিসে, এই নাচের জন্ম, যেখানে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষেরা নিজেদের মতো করে আনন্দ খুঁজে নিত।
কানকান নাচের প্রথম রূপটি ছিল অনেকটা স্বতঃস্ফূর্ত। শ্রমিক শ্রেণির মানুষজন একত্রিত হয়ে নাচত, নিজেদের মধ্যে আনন্দ ভাগ করে নিত। সে সময়ে এই নাচ ছিল একটি প্রতিবাদের ভাষা, যা সমাজের কঠোর নিয়মের বিরুদ্ধে তাদের বিদ্রোহের প্রতীক ছিল। কানকানের প্রথম দিকের নর্তকদের মধ্যে পুরুষরাই প্রধান ছিল, যারা এই নাচের মাধ্যমে নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করত।
সময় গড়ানোর সাথে সাথে কানকান-এর ধরনে পরিবর্তন আসে। এটি ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং অভিজাত শ্রেণীর মধ্যে এর কদর বাড়ে। কানকান তখন শুধু আর শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি এক দর্শনীয় অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। বিখ্যাত মুলাঁ রুজ-এর মতো স্থানে এই নাচের পরিবেশনা শুরু হয়, যা কানকানকে বিশ্বজুড়ে পরিচিত করে তোলে।
কানকান নাচের ইতিহাসে কয়েকজন উল্লেখযোগ্য নারীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁদের মধ্যে সেলেস্ত মোগাদর, যিনি একসময় যৌনকর্মী ছিলেন, কিন্তু নাচের মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেন। এলিস সার্জেন্ট, যিনি লা রেইন পমারে নামে পরিচিত ছিলেন, এবং লুইজ ওয়েবার, যিনি লা গুলু নামে পরিচিত ছিলেন, তাঁদের নাচের ধরন ও ব্যক্তিত্বের জন্য বিখ্যাত ছিলেন।
তবে, কানকানের বিবর্তন শুধু একটি নাচের ধরনের পরিবর্তন ছিল না। এটি ছিল সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের জীবনযাত্রার প্রতিচ্ছবি। শ্রমিক শ্রেণির মানুষের আনন্দ থেকে শুরু করে সমাজের অভিজাত শ্রেণীর বিনোদন পর্যন্ত, কানকান বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন রূপে প্রকাশিত হয়েছে।
বর্তমানে, কানকান-এর ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশনা দেখা যায়। এই নাচের ইতিহাস, সমাজের প্রতিচ্ছবি এবং এর বিবর্তন আজও মানুষকে আকৃষ্ট করে। কানকান, যা একসময় ছিল বিদ্রোহের প্রতীক, আজও ফরাসি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে টিকে আছে।
তথ্য সূত্র: The Guardian