গ্র্যাটিফুল ডেড: সঙ্গীতের জগতে এক কিংবদন্তি, ৬০ বছরের পথচলা।
ষাটের দশকে আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোতে জন্ম নেওয়া ‘গ্র্যাটিফুল ডেড’ (Grateful Dead) এক অবিস্মরণীয় ব্যান্ডের নাম। তাদের সঙ্গীতের ধারা, অনুরাগী এবং সঙ্গীতের প্রতি নিবেদন আজও সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে, ব্যান্ডটি আবারও আলোচনায় এসেছে, তাদের সৃষ্টিশীলতা এবং ভক্তদের প্রতি ভালোবাসার কারণে।
গ্র্যাটিফুল ডেড-এর যাত্রাটা ছিল অন্যরকম। ১৯৬০-এর দশকে, যখন বিশ্বজুড়ে পরিবর্তনের হাওয়া, সেই সময়ে তারা সঙ্গীতকে নতুন রূপে পরিবেশন করতে শুরু করে।
তাদের গানগুলি ছিল দীর্ঘ, স্বতঃস্ফূর্ত এবং পরীক্ষামূলক। জ্যাম সেশনগুলির মাধ্যমে তারা সঙ্গীতের জগতে নিজেদের একটি বিশেষ স্থান তৈরি করে নেয়। তাদের এই ভিন্নধর্মী সঙ্গীতশৈলী দ্রুত শ্রোতাদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করে।
ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য ববি ওয়্যার বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম সঙ্গীতের জগৎটাকে নিজেদের মতো করে তৈরি করতে।” এই ভাবনা থেকেই তারা প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে নিজেদের মতো করে কাজ শুরু করেন।
তাদের কনসার্টগুলোতে ভক্তদের টেপ রেকর্ড করার অনুমতি দেওয়া হতো, যা সেই সময়ে ছিল খুবই বিরল। এমনকি, বুটলেগারদের জন্য তারা আলাদা জায়গা করে দিতেন, যেখানে তারা নিজেদের টেপগুলো বিনিময় করতে পারতেন।
এটি ছিল তাদের উদার মানসিকতার প্রমাণ।
গ্র্যাটিফুল ডেড-এর ভক্তরা, যারা ‘ডেডহেডস’ নামে পরিচিত, তাদের ব্যান্ডটির প্রতি ছিল গভীর আবেগ।
ডেডহেডসরা শুধু গান শুনতেন না, বরং ব্যান্ডের প্রতিটি কনসার্টে যেতেন এবং তাদের জীবনযাত্রাকেও ব্যান্ডের সঙ্গে এক করে ফেলেছিলেন। কনসার্টের সময় তারা খাবার দোকান দিতেন বা কাপড় বিক্রি করতেন, যা তাদের যাযাবর জীবনের একটি অংশ ছিল।
ব্যান্ডের দীর্ঘ এই পথচলার পেছনে ছিল তাদের সৃজনশীলতা। তারা সবসময় নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছেন, যা তাদের গানগুলোকে করেছে আরও আকর্ষণীয়।
তাদের “অ্যামেরিকান বিউটি” এবং “ওয়ার্কিংম্যান’স ডেড”-এর মতো অ্যালবামগুলো আজও শ্রোতাদের মধ্যে জনপ্রিয়।
১৯৯৫ সালে ব্যান্ডের প্রধান শিল্পী জেরি গার্সিয়ার মৃত্যুর পর, অনেকেই ভেবেছিলেন হয়তো গ্র্যাটিফুল ডেড-এর পথচলা এখানেই শেষ। কিন্তু ববি ওয়্যার-এর মতে, “জেরি চাইতেন, আমরা যেন এগিয়ে যাই।”
তাই তারা তাদের কাজ চালিয়ে যান, যা তাদের ভক্তদের জন্য ছিল বিশাল এক পাওয়া।
বর্তমানে, গ্র্যাটিফুল ডেড-এর সদস্যরা বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করছেন। তাদের মধ্যে ‘ডেড অ্যান্ড কোম্পানি’ খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
এই ব্যান্ডটি ২০১৮ সালে প্রায় ১১৫ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা তাদের জনপ্রিয়তার প্রমাণ। ববি ওয়্যার এবং উলফ ব্রোস-এর মতো শিল্পীরা এখনো নিয়মিত কনসার্ট করে যাচ্ছেন।
গ্র্যাটিফুল ডেড-এর গল্প শুধু একটি ব্যান্ডের গল্প নয়, এটি সঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা, সৃজনশীলতা এবং ভক্তদের প্রতি নিবেদনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তাদের সঙ্গীত আজও মানুষকে অনুপ্রাণিত করে, যা তাদের ৬০ বছরের দীর্ঘ যাত্রাকে আরও মহিমান্বিত করে তোলে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান