শিরোনাম: লন্ডনের পার্কে দুই বোনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড: পুলিশের ভূমিকা ও পরিবারের লড়াই
২০২০ সালের জুন মাসে লন্ডনের একটি পার্কে ঘটে যাওয়া বীভৎস এক ঘটনার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এই ঘটনায় দুই বোন, বিবা হেনরি এবং নিকোল স্মলম্যান-এর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এবং এর পরবর্তী ঘটনাবলী নিয়ে সম্প্রতি একটি তথ্যচিত্র প্রকাশিত হয়েছে, যা ঘটনার ভয়াবহতা আরও একবার সামনে এনেছে।
ঘটনার শুরুটা হয়, যখন বিবার জন্মদিন উপলক্ষে দুই বোন পার্কে মিলিত হয়েছিলেন। গভীর রাতে তাদের সাথে শেষবারের মতো পরিবারের সদস্যরা কথা বলেন। এরপর থেকেই তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
পরিবারের সদস্যরা যখন তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলেন, তখনই উদ্বেগের ঢেউ লাগে। অবশেষে, ঘটনার প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পর, নিকোলের সঙ্গীর বাবা-মা তাদের মৃতদেহ খুঁজে পান।
এই ঘটনার তদন্তে পুলিশের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত হতাশাজনক। শুরুতে নিখোঁজদের খুঁজে বের করতে তাদের চরম গাফিলতি দেখা যায়। ঘটনার তদন্তে বিলম্বের পাশাপাশি, পুলিশের কিছু সদস্যের আচরণ ছিল অত্যন্ত নিন্দনীয়।
তারা ঘটনাস্থলে নিহত নারীদের ছবি তোলে এবং সেগুলো নিজেদের মধ্যে আদান-প্রদান করে, যা জাতিগত বিদ্বেষ ও নারীবিদ্বেষের চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত।
তদন্তে জানা যায়, এই হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ছিল দানিয়াল হোসেন নামের এক ব্যক্তি। সে অনলাইনে বিভিন্ন চরমপন্থী গোষ্ঠীর সাথে যুক্ত ছিল এবং লটারিতে জেতার জন্য নারীদের বলি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল।
দানিয়ালের কাছ থেকে পাওয়া একটি “চুক্তি” থেকে জানা যায়, সে ছয় মাসের মধ্যে ছয়জন নারীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল।
পরবর্তীতে, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দানিয়াল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং দুটি পৃথক ধারায় তাকে ৩৫ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, ছবি তোলার অভিযোগে অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তাকেও কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যদিও তাদের শাস্তির মেয়াদ ছিল খুবই কম।
এই ঘটনায় নিহত নারীদের পরিবার, বিশেষ করে তাদের মা মিনা, শোককে শক্তিতে পরিণত করে নারী নিরাপত্তা এবং পুলিশি সংস্কারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। মিনার মতে, প্রকৃত অনুশোচনা ছাড়া ক্ষমা নেই, এবং ন্যায়বিচার ছাড়া সমাজের উন্নতি সম্ভব নয়।
তিনি নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং পুলিশের জবাবদিহিতা বাড়ানোর জন্য অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই তথ্যচিত্রটি সেই লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি, যা একই সাথে শোকের গভীরতা এবং ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরেছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান