বার্লিনের আনাচে কানাচে একসময় সিনেমার বিশাল আকারের পোস্টারগুলো দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করত। হাতে আঁকা এই পোস্টারগুলোর শিল্পী ছিলেন গোটজ ভ্যালিয়েন। গত তিন দশক ধরে তিনি এই কাজটি করে আসছিলেন।
কিন্তু ডিজিটাল প্রযুক্তির আগ্রাসনে এবং সিনেমা হলের সংখ্যা কমে যাওয়ায়, এই শিল্পের কদরও যেন কমতে শুরু করেছে। ৬৪ বছর বয়সী এই শিল্পী এখন বার্লিনের শেষ সিনেমা পোস্টার আঁকিয়ে।
অস্ট্রিয়ায় জন্ম নেওয়া ভ্যালিয়েন ১৯৮০-র দশকে বার্লিনে আসেন। তাঁর কাজগুলোতে পপ আর্টের ছোঁয়া দেখা যায়। সিনেমার মূল বিষয়গুলো ফুটিয়ে তোলাই ছিল তাঁর প্রধান আকর্ষণ।
পেনেলোপ ক্রুজের “ভলভার” সিনেমার পোস্টার আঁকার সময় তিনি বলেছিলেন, “মেয়েটি কি অসাধারণ!” তাঁর ক্যানভাসগুলো সাধারণত ৭ বাই ৯ মিটার পর্যন্ত বড় হতো। বার্লিনের সিনেমা হলগুলোতে তাঁর আঁকা পোস্টারগুলো শোভা পেত।
ডেলফির মতো বিখ্যাত সিনেমা হলগুলোতেও তাঁর কাজ দেখা গেছে।
এক সময় কুর্ফুরস্টেনডাম-এর মতো জায়গায় অনেক সিনেমা হল ছিল, যেখানে তাঁর আঁকা পোস্টার দেখা যেত। কিন্তু এখন সেখানে ফ্যাশন ব্র্যান্ড আর দোকানের ভিড়। ভ্যালিয়েনের মতে, “বিজ্ঞাপন মানুষকে আকৃষ্ট করে, আর আমি সেখানে মানবিক স্পর্শ যোগ করি।”
তাঁর কাজের এই বিশেষত্বই সম্ভবত এখনও তাঁকে টিকিয়ে রেখেছে।
বর্তমানে, ফিল্মথিয়েটার এম ফ্রেডরিখশাইন (FaF) নামের একটি সিনেমা হলই একমাত্র ভ্যালিয়েনকে দিয়ে তাদের সিনেমার প্রচারের জন্য পোস্টার আঁকায়। এই সিনেমা হলের বাইরের দেয়ালে এবং টিকিট কাউন্টারের আশেপাশে তাঁর আঁকা পোস্টারগুলো এখনো দেখা যায়।
ভ্যালিয়েন জানান, জার্মানির আরও দুইজন শিল্পী এই কাজটি করেন। তবে প্যারিস ও পর্তুগালের মতো দেশগুলোতেও একসময় এই ধরনের পোস্টারের প্রচলন ছিল, যা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
FaF-এর ম্যানেজার আন্দ্রেয়াস টোল্লে বলেন, “পোস্টারগুলো আমাদের এলাকার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। নতুন পোস্টার লাগানোর পর এখন মানুষ ছবি তোলে।”
সিনেমা পোস্টার শিল্পের ইতিহাস সিনেমার মতোই পুরনো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু বদলে গেছে। এখন সিনেমার প্রচারণার জন্য ডিজিটাল মাধ্যমের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়।
এর ফলে হাতে আঁকা পোস্টারের চাহিদা কমে গেছে। এর কারণ হিসেবে সিনেমার স্বল্পকালীন প্রদর্শনীর কথাও বলা যায়।
ভ্যালিয়েনের স্টুডিওতে অ্যাক্রিলিক রঙের ছড়াছড়ি, ব্রাশ আর স্প্রে গানের আনাগোনা। তিনি জানান, সিনেমার কাজের মাধ্যমে তিনি মূলত ‘শ্রমের প্রতি ভালোবাসা’ দেখান।
কারণ এই কাজ থেকে তাঁর তেমন লাভ হয় না। তিনি অন্যান্য শিল্পকর্মের দিকেও মনোযোগ দেন। FaF সিনেমা হল তাদের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ভ্যালিয়েনের কিছু সেরা পোস্টার নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।
তথ্য সূত্র: The Guardian