মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন বিষয়ক কড়া নীতির শিকার কয়েকজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর মামলার বিষয়টি বর্তমানে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সম্প্রতি, ফিলিস্তিনপন্থি বিভিন্ন আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া পদক্ষেপগুলো নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
এসব ঘটনার জেরে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তেমনিভাবে অভিবাসন নীতি নিয়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রশ্ন।
এরকম পাঁচটি আলোচিত মামলার বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:
প্রথম ঘটনাটি হলো, তুরস্কের নাগরিক রুয়েসা ওজতুর্কের। তিনি টাফ্টস ইউনিভার্সিটির পিএইচডি শিক্ষার্থী। ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রায় দেড় মাস কারাভোগের পর সম্প্রতি আদালত তাকে মুক্তি দেয়। রুয়েসার আইনজীবী জানান, কর্তৃপক্ষের কাছে তার বিরুদ্ধে কোনো উপযুক্ত প্রমাণ ছিল না। বিচারক এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, রুয়েসার মুক্তি বাকস্বাধীনতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
একই দিনে, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহসেন মাহদাওয়ীর মুক্তির রায় আসে। তিনিও ফিলিস্তিন আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
কর্তৃপক্ষের দাবি, তার কার্যক্রম মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির পরিপন্থী। তবে আদালত তার গ্রেফতারকে ভিন্নমত দমনের চেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। জানা যায়, মুক্তির পর মাহদাওয়ি যুক্তরাষ্ট্রে তার নাগরিকত্বের আবেদন সম্পন্ন করার সুযোগ পান।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো, জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ফেলো বাদার খান সুরীর ভিসা বাতিল এবং তাকে আটক করা।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি হামাসের পক্ষে প্রচারণা চালাতেন এবং সামাজিক মাধ্যমে ইহুদিবিদ্বেষী মন্তব্য করেছেন। বাদার খানের আইনজীবীরা বলছেন, তার স্ত্রীর ফিলিস্তিনপ্রীতি এবং শ্বশুর হামাসের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে।
বাদার খানের কারাবাসের কারণে তার শিক্ষাজীবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষক কসেনিয়া পেত্রোভাকে ফ্রেঞ্চ সরকারের কাছে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে আটক করা হয়।
তিনি ফ্রান্স থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রূণের নমুনা পাচার করার চেষ্টা করছিলেন বলে অভিযোগ। কসেনিয়া অবশ্য দাবি করেছেন, অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে এমনটা হয়েছে। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি ডিটেনশন সেন্টারে বন্দী রয়েছেন।
সবশেষ ঘটনাটি হলো, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক এবং ফিলিস্তিনি শরণার্থী মাহমুদ খলিলের।
গত গ্রীষ্মে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে হামাসকে সমর্থন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মাহমুদ বর্তমানে একটি ডিটেনশন সেন্টারে বন্দী রয়েছেন এবং তার আইনজীবীরা মুক্তির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই মামলাগুলো মূলত ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির কঠোরতাকেই তুলে ধরে। বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক অধিকার এবং বাকস্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
ভবিষ্যতে এই ধরনের নীতিমালার কারণে আরো অনেক শিক্ষার্থীর জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন