যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়া নিয়ে দ্বিধায় বিদেশি শিক্ষার্থীরা! ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষা: ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিমালার প্রভাব

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন দেখা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য এক নতুন উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়কালে গৃহীত কিছু নীতিমালার কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সেখানে পড়াশোনার সুযোগ কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভিসা জটিলতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং কিছু ক্ষেত্রে বিতাড়নের হুমকির কারণে অনেক শিক্ষার্থী এখন বিকল্প পথের সন্ধান করছেন।

উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীদের কাছে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। উন্নতমানের শিক্ষা ব্যবস্থা, গবেষণার সুযোগ এবং কর্মসংস্থানের সুবিধার কারণে প্রতি বছর বহু শিক্ষার্থী এখানে আসে।

কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের সময়কালে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া কঠিন করা হয় এবং বিভিন্ন বিতর্কিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি তৈরি করে।

এই পরিস্থিতিতে চীনের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী মা তিয়ানইউ-এর কথা ভাবুন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ এবং পরবর্তীতে ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা তাঁর মনে সংশয় সৃষ্টি করেছে।

তিনি জানান, পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাঁকে এখন বিকল্প কিছু বিষয় ভাবতে হচ্ছে।

আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, ফিলিস্তিনিপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কিছু শিক্ষার্থীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করার সিদ্ধান্ত। এই ধরনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে।

অনেক শিক্ষার্থী এখন কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোতে পড়াশোনার সুযোগ খুঁজছেন, যেখানে অভিবাসন নীতি তুলনামূলকভাবে সহজ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, বিদেশি শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি তাদের আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা হ্রাস পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার এখনো শিক্ষার্থীদের জন্য আকর্ষণীয়। বিশেষ করে, ঐচ্ছিকভাবে কাজের সুযোগ (Optional Practical Training – OPT) প্রোগ্রামটি বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার সুযোগ পান।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি মোকাবিলায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বিদেশি শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করতে চাইছে এবং STEM (Science, Technology, Engineering, and Mathematics) বিষয়ক প্রোগ্রামগুলোর ওপর জোর দিচ্ছে, যা OPT প্রোগ্রামের সুযোগ তৈরি করে।

অন্যদিকে, কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চাইছে। তারা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার জন্য তাদের অভিবাসন নীতি সহজ করার চেষ্টা করছে।

কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংগঠন ‘ইউনিভার্সিটিস কানাডা’ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যাতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় সুযোগ তৈরি করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে ইচ্ছুক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের ভিসা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।

এছাড়াও, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁদের বিকল্প গন্তব্য এবং বিভিন্ন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কেও ধারণা রাখতে হবে।

তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *