আর্জেন্টিনার আদালতে লুকানো নাৎসি’র বাক্স! স্তম্ভিত বিশ্ব

আর্জেন্টিনার সুপ্রিম কোর্টের বেসমেন্টে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার নাৎসিবাদের প্রচারপত্র ও অন্যান্য সামগ্রীর বিশাল ভাণ্ডার সম্প্রতি খুঁজে পাওয়া গেছে। রবিবার দেশটির আদালত সূত্রে এই খবর জানানো হয়েছে।

আদালত জানিয়েছে, প্রায় ৮৩টি বাক্সে ভরা এই নাৎসি-সংক্রান্ত জিনিসপত্রগুলো ১৯৪১ সালের জুন মাসে জাপানের একটি জাহাজে করে জার্মানির টোকিও দূতাবাস থেকে আর্জেন্টিনায় পাঠানো হয়েছিল। অনুসন্ধানে জানা গেছে, জাপানি জাহাজ ‘নান-আ-মারু’ করে এই মালপত্র আসে।

ঐ সময়ে, এই বিশাল চালানটি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। কারণ, তারা আশঙ্কা করছিলেন, এর বিষয়বস্তু হয়তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আর্জেন্টিনার নিরপেক্ষতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। জার্মান কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, বাক্সগুলোতে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জিনিসপত্র ছিল।

কিন্তু আর্জেন্টিনার কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কয়েকটি বাক্স খুলে পরীক্ষা করে। তাদের নজরে আসে নাৎসি জার্মানির প্রচারপত্র, ছবি, পোস্টকার্ড এবং নাৎসি পার্টির হাজারো খাতা ও নোটবুক। পরে, ফেডারেল আদালত এই সামগ্রীগুলো বাজেয়াপ্ত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।

বিষয়টি নিয়ে সেই সময় সুপ্রিম কোর্ট কোনো পদক্ষেপ নিয়েছিল কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

প্রায় ৮৪ বছর পর, আদালতের কর্মীরা একটি জাদুঘর তৈরির সময় বাক্সগুলো খুঁজে পান। আদালত জানায়, ‘বাক্সগুলোর একটি খোলার পরে, আমরা বুঝতে পারি এর মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আর্জেন্টিনায় অ্যাডলফ হিটলারের আদর্শকে প্রতিষ্ঠা ও প্রচারের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস ছিল।’

বর্তমানে, আদালত বাক্সগুলো অতিরিক্ত নিরাপত্তা-সহ একটি কক্ষে সরিয়ে নিয়েছে এবং বুয়েনস আইরেসের হলোকস্ট জাদুঘরকে এগুলোর সংরক্ষণ ও তালিকা তৈরির কাজে যুক্ত হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা নাৎসিদের অর্থায়ন নেটওয়ার্কসহ হলোকস্টের অজানা দিকগুলো সম্পর্কে তথ্যের জন্য এগুলো পরীক্ষা করবেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনা অক্ষশক্তির সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। এরপর তারা জার্মানি ও জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

হলোকস্ট জাদুঘরের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৩৩ থেকে ১৯৫৪ সালের মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার ইহুদি, নাৎসিদের নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ইউরোপ থেকে পালিয়ে আর্জেন্টিনায় আশ্রয় নিয়েছিল। বর্তমানে, লাতিন আমেরিকায় আর্জেন্টিনার ইহুদি জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *