ট্রাম্পের শুল্ক: কিছু ব্যবসার লাভ, অনেকের ক্ষতি!

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য শুল্ক: বিশ্ব বাণিজ্যের জটিলতা ও ব্যবসার ওপর তার প্রভাব।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে আমদানি পণ্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছিল, যা কিছু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছোট ব্যবসার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করলেও, অনেকের জন্য তা ক্ষতির কারণ হয়েছে। এই ঘটনা বিশ্ব বাণিজ্য নীতির জটিলতা এবং এর প্রভাব সম্পর্কে ধারণা দেয়।

মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের ফারিবাউ মিল-এর কথা ধরা যাক। এখানে একশ ষাট বছর ধরে, পশমের আঁশ থেকে কম্বল তৈরির প্রক্রিয়া চলে আসছে। এই ঐতিহ্যবাহী কারখানায় আধুনিক যন্ত্রপাতির সঙ্গে পুরনো দিনের সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়।

মিলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রস উইডময়ার জানান, শুল্কের কারণে তাদের ব্যবসা তেমন প্রভাবিত হয়নি, বরং নতুন গ্রাহকদের কাছ থেকে তারা অনেক বেশি অর্ডার পাচ্ছেন। বিশেষ করে আসন্ন শীত এবং বড়দিনের মৌসুমে তাদের ব্যবসার চাহিদা আরও বেড়েছে।

অন্যদিকে, মন্টানার একটি সংস্থা, ওয়েস্ট পাও, যারা পুনর্ব্যবহৃত সামগ্রী দিয়ে কুকুরের খেলনা তৈরি করে, তারাও এই শুল্ক নীতির কারণে সুবিধা পেতে শুরু করেছে। তাদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্পেন্সার উইলিয়ামস জানান, চীন থেকে আসা খেলনার উপর উচ্চ শুল্ক আরোপের ফলে তাদের পণ্যের চাহিদা বেড়েছে।

তাদের তৈরি খেলনা এখন স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও পরিচিতি লাভ করছে। তবে, উইলিয়ামস মনে করেন, এই শুল্ক নীতি সব সময় একই রকম নাও থাকতে পারে। এছাড়া, রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কের প্রভাব তাদের ব্যবসার উপর পড়তে পারে। ওয়েস্ট পাও বর্তমানে ৪০টি দেশে খেলনা রপ্তানি করে, যার মধ্যে কানাডা তাদের প্রধান বাণিজ্য সহযোগী।

অন্যদিকে, নিউইয়র্কের শেরিলে অবস্থিত শেরিল ম্যানুফ্যাকচারিং নামক একটি সংস্থা, যারা ‘লিবার্টি টেবিলটপ’ নামে ফ্ল্যাটওয়্যার তৈরি করে, তারাও শুল্ক বৃদ্ধির কারণে উপকৃত হয়েছে। তাদের মতে, এই শুল্ক নীতির ফলে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনকারীরা সুবিধা পাবে এবং তারা তাদের ব্যবসা আরও বাড়াতে পারবে।

তারা এখন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের কাছে পণ্য সরবরাহ করার পাশাপাশি সরাসরি ভোক্তাদের কাছেও পণ্য বিক্রি করছে।

তবে, মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জেসন মিলার মনে করেন, শুল্ক নীতির মূল সমস্যা হল অনিশ্চয়তা। ব্যবসায়ীদের জন্য ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করা কঠিন হয়ে পড়ে, কারণ নীতিগুলো দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে।

ফারিবাউ মিলের উইডময়ারও একই মত প্রকাশ করেন। তার মতে, নীতিনির্ধারণে আরও বেশি স্থিতিশীলতা থাকলে ব্যবসার জন্য ভালো হয়।

এই ঘটনাগুলো থেকে বোঝা যায়, বাণিজ্য শুল্ক নীতি বিভিন্ন ব্যবসার উপর বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। একদিকে, কিছু ব্যবসার জন্য এটি সুযোগ সৃষ্টি করে, অন্যদিকে, অনেক ব্যবসায় ক্ষতির কারণ হয়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, বিশ্ব বাজারের এই ধরনের পরিবর্তনগুলি আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পের মত রপ্তানিমুখী শিল্পগুলির উপর কি প্রভাব ফেলবে, তা গভীরভাবে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। এছাড়া, বিশ্ব বাণিজ্য নীতি এবং দেশের অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আরও সচেতনতা তৈরি করা দরকার।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *