গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নারী ও শিশুসহ নিহতের সংখ্যা বাড়ছে, হামাসের হাতে বন্দী মার্কিন-ইসরায়েলি নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় হতাহতের ঘটনা বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া মানুষের ওপর চালানো হামলায় অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এর মধ্যেই হামাস জানিয়েছে, তারা তাদের হাতে বন্দী একজন মার্কিন-ইসরায়েলি নাগরিককে মুক্তি দেবে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জাবালিয়ায় একটি স্কুলে চালানো হামলায় নিহতদের মধ্যে পাঁচজন শিশু ও চারজন নারী রয়েছেন। এছাড়া, আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী অবশ্য বলছে, তারা শুধুমাত্র জঙ্গি-নিষেধকদের লক্ষ্য করে হামলা চালায় এবং বেসামরিক হতাহতের জন্য হামাসকে দায়ী করে, কারণ তাদের যোদ্ধারা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কাজ করে। তবে, সর্বশেষ হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরকালে এই মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা আসে। গত দুই মাস আগে যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেওয়ার পর থেকে ইসরায়েল গাজায় তাদের সামরিক অভিযান জোরদার করেছে। এর ফলে সেখানকার মানবিক সংকট আরও তীব্র হচ্ছে, যেখানে খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য সরবরাহ প্রায় ১০ সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে।
খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, অবরোধ অব্যাহত থাকলে গাজায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল ফুড সিকিউরিটি ফেইজ ক্লাসিফিকেশন (আইএফসি) নামক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা জানিয়েছে, পরিস্থিতি পরিবর্তন না হলে দুর্ভিক্ষের সম্ভবনা প্রবল। তাদের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় পাঁচ লাখ ফিলিস্তিনি চরম খাদ্য সংকটে রয়েছেন এবং তাদের অনাহারে মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া, আরও দশ লাখ মানুষ জরুরি খাদ্য সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩৭ জনের মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছে। এছাড়া, আহত হয়েছেন ৯৪ জন। নিহতদের মধ্যে চারজনের মরদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৫২,৮৬২ জন এবং আহত হয়েছেন ১,১৯,৬৪৮ জন।
এদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) ইসরায়েল তাদের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, আদালত এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির এখতিয়ার রাখে না।
অন্যদিকে, হামাস জানিয়েছে, তারা তাদের হাতে বন্দী শেষ জীবিত মার্কিন-ইসরায়েলি নাগরিককে মুক্তি দেবে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি thiện чувства প্রকাশ করতে চাইছে। ওই নাগরিকের নাম ইদান আলেকজান্ডার। তিনি একজন ইসরায়েলি সেনা ছিলেন এবং গত বছরের ৭ অক্টোবর তাকে বন্দী করা হয়।
ইদান আলেকজান্ডারের পরিবার তাদের ছেলের মুক্তির খবরে আনন্দ প্রকাশ করেছে এবং ট্রাম্প প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। তারা ইসরায়েলি সরকারের প্রতি অন্য বন্দীদের মুক্তির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
তবে, ইসরায়েলি জিম্মিদের কিছু পরিবারের মধ্যে এই মুক্তি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, আলেকজান্ডারের মুক্তির বিষয়টি তার মার্কিন নাগরিকত্বের কারণে গুরুত্ব পাচ্ছে, কিন্তু অন্যান্য জিম্মিদের ভাগ্যে কি ঘটবে, তা নিয়ে তারা চিন্তিত।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস