মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ অবশেষে কিছুটা শান্ত হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে শুল্ক কমানোর ফলে বিশ্ব বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে, যার ফলে অস্থিরতা কিছুটা কমেছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই পদক্ষেপ সম্ভবত আমেরিকার মন্দা এড়াতে সহায়ক হবে।
জানা গেছে, মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি এবং চীনের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনার পর শুল্কের বোঝা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো হয়েছে। এর ফলে, মার্কিন শেয়ার বাজারে তাৎক্ষণিক ইতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে।
ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ সূচক ১০০০ পয়েন্ট বেড়েছে, যা প্রায় ২.৪ শতাংশ। এস অ্যান্ড পি ৫০০ এবং নাসডাকের ফিউচারও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই ঘটনার আগে, উভয় দেশই একে অপরের পণ্যের উপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেছিল, যা বাণিজ্যকে কার্যত বন্ধ করে দিয়েছিল। এর ফলে পণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং সরবরাহ ঘাটতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বাণিজ্য যুদ্ধ উভয় দেশের অর্থনীতিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছিল।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, উভয় পক্ষই শুল্ক প্রায় ১১৫ শতাংশ পয়েন্ট কমাতে সম্মত হয়েছে। যদিও শুল্কের হার এখনও ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের আগের তুলনায় বেশি, তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এটি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্ক কমানোর পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন ভবিষ্যতে একে অপরের উপর পুনরায় শুল্ক আরোপ করা এড়াতে একটি কাঠামো তৈরি করতে সম্মত হয়েছে।
ডয়েচে ব্যাংকের একজন কৌশলবিদ হেনরি অ্যালেন মনে করেন, এই পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক দিক এবং সম্ভবত মন্দা এড়াতে সহায়ক হবে।
শেয়ার বাজারের এই উল্লম্ফনের ফলে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের দিকে ঝুঁকছেন। এর পাশাপাশি, মার্কিন ডলারের মূল্য ১ শতাংশ বেড়েছে।
তেলের বাজারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে, যেখানে মার্কিন তেল ব্যারেল প্রতি প্রায় ৬৩ ডলারে পৌঁছেছে।
তবে, কিছু ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাবও দেখা গেছে। বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বিবেচিত সোনা বিক্রি করে দেওয়ায় এর দাম কমেছে।
প্রযুক্তি খাতের শেয়ারগুলি বিশেষভাবে লাভবান হয়েছে। অ্যাপল, টেসলা, এনভিডিয়া, অ্যামাজন এবং ইন্টেলের শেয়ারের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
বিলাসবহুল পণ্যের উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলির শেয়ারও পুনরুদ্ধার করেছে।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, এই সমঝোতা ছিল কঠিন, তবে সম্মানজনক।
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, চীন এখন আমেরিকার পণ্যের উপর বেশি নির্ভরশীল, যা আলোচনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে।
বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে মার্কিন ভোক্তাদের মধ্যে মূল্যবৃদ্ধি এবং ঘাটতির উদ্বেগ বেড়েছিল। কিন্তু এই নতুন চুক্তির ফলে পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভবিষ্যতে, যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত প্রয়োজনীয়তা, যেমন – ওষুধ, সেমিকন্ডাক্টর চিপস এবং স্টিলের মতো জিনিসের জন্য চীনের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাইছে।
বাণিজ্য ক্ষেত্রে আরও ন্যায্য নীতি গ্রহণের দিকেও তারা নজর দেবে।
এই ঘটনা বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর সরাসরি প্রভাব না ফেললেও, বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তনগুলি আমাদের দেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে।
বিশ্ব অর্থনীতির এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলি বাংলাদেশের বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন