দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অস্কার শিন্ডলারের তৎপরতায় রক্ষা পাওয়া ১,২০০ ইহুদির স্মৃতি বিজড়িত চেক প্রজাতন্ত্রের একটি কারখানায় সম্প্রতি একটি জাদুঘর খোলা হয়েছে। ব্রনেক নামক স্থানে অবস্থিত এই কারখানাটি একসময় ছিল একটি টেক্সটাইল মিল।
নাৎসিদের হাতে ১৯৩৮ সালে ইহুদি মালিকদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয় এটি, যা পরে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পরিণত হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই জাদুঘরটি জনসাধারণের জন্য খোলা হয়। শিন্ডলারের এই সাহসী ভূমিকার কথা বিশ্বজুড়ে পরিচিত, যা স্টিভেন স্পিলবার্গ পরিচালিত ‘শিন্ডলার্স লিস্ট’ চলচ্চিত্রে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
এই জাদুঘরের ধারণা এবং বাস্তবায়নে প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন ড্যানিয়েল লো-বিয়ার। তাঁর পরিবার এক সময় এই কারখানার মালিক ছিল।
১৮৫৪ সালে তারা এখানে একটি উল কারখানা স্থাপন করেন, যা পরবর্তীতে ইউরোপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারখানায় পরিণত হয়। লো-বিয়ার জানান, তাঁদের পূর্বপুরুষদের ভিটেমাটি থেকে বিতাড়িত হতে হয়েছিল।
তাই এই জাদুঘরের মাধ্যমে তাঁরা ইতিহাসের একটি অংশ ফিরিয়ে আনতে চান এবং অস্কার শিন্ডলার ও গ্রামের ইতিহাস তুলে ধরতে চান।
জাদুঘরটিতে শিন্ডলার, তাঁর স্ত্রী এমিলি, লো-বিয়ার পরিবার এবং এলাকার সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। এখানে হলোকাস্টে sobrevivientes-দের সাক্ষ্য, বিভিন্ন প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং কনসার্টের ব্যবস্থাও রয়েছে।
এই জাদুঘরের একটি অংশে, অতীতের স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখতে একটি কাঁচের দেয়াল তৈরি করা হয়েছে, যা বর্তমান এবং অতীতের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে।
লো-বিয়ার জানিয়েছেন, “আমরা চাই এই গল্পগুলো মানুষ জানুক এবং তাদের নিজস্ব মতামত তৈরি করুক।” ২০১৯ সালে, তিনি এই কারখানার পুরাতন অংশটি কিনে জাদুঘর তৈরির উদ্দেশ্যে ‘আর্কস ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন।
এই কাজে স্থানীয় সরকার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুদানও সহায়তা করেছে।
বর্তমানে, জাদুঘরটি প্রতিদিন খোলা হয় না, তবে স্কুলগুলোর জন্য এখানে বিশেষ শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ভবিষ্যতে, শিন্ডলারের অফিস এবং এসএস সৈন্যদের ব্যারাকসহ কারখানার অন্যান্য অংশগুলো সংস্কার করার পরিকল্পনা রয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শিন্ডলারের অসামান্য অবদান ছিল। তিনি শুধুমাত্র ১,২০০ ইহুদির জীবন বাঁচিয়েছিলেন তাই নয়, তাঁর স্ত্রী এমিলিও আরো ১০০ জনের বেশি ইহুদিকে রক্ষা করেছিলেন।
তাঁদের এই ত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ, ১৯৯৩ সালে ইয়াড ভাশেম (Yad Vashem) তাঁদের ‘জাতিসমূহের মাঝে ন্যায়বান’ উপাধি দেয়।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস