বিখ্যাত র্যাপার এবং সঙ্গীত প্রযোজক শন ‘ডিডি’ কম্বস-এর বিচার প্রক্রিয়া এখন নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে চলছে। যৌন ব্যবসা, সংগঠিত অপরাধ চক্র পরিচালনা এবং যৌন ব্যবসার উদ্দেশ্যে নারী পাচারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
গত ৫ই মে, এই মামলার শুনানি শুরু হয়।
ডিডি, যিনি একাধারে একজন গ্র্যামি বিজয়ী এবং ‘ব্যাড বয় রেকর্ডস’-এর প্রতিষ্ঠাতা, তার খ্যাতি ও অর্থের জোরে নারীদের উপর ২০ বছর ধরে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে, ৫৫ বছর বয়সী এই সঙ্গীত তারকার ১৫ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।
শুনানিতে ১২ জন বিচারক এবং ৬ জন বিকল্প বিচারক নিয়ে একটি জুরি গঠন করা হয়েছে। সরকারি কৌঁসুলিরা এবং ডিডির আইনজীবীরা তাদের বক্তব্য পেশ করবেন। বিচারক অরুণ সুব্রামনিয়ান এই মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করছেন।
আদালতে, নির্যাতিতাদের মধ্যে তিনজন নারী এবং ডিডির সাবেক কয়েকজন কর্মচারী সাক্ষ্য দেবেন বলে জানা গেছে। অভিযোগপত্রে ডিডির বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন, শারীরিক সহিংসতা, অপহরণ, জোরপূর্বক শ্রম, ঘুষ প্রদান, বিচার কাজে বাধা এবং অগ্নিসংযোগের মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ডিডি নারীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন চালিয়েছেন, তাদের যৌন আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার জন্য, নিজের খ্যাতি রক্ষার জন্য এবং অপরাধ গোপন করার জন্য। নারীদের মাদক খাইয়ে দিনের পর দিন যৌন কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করা হতো, যা ‘ফ্রিক অফস’ নামে পরিচিত ছিল।
ডিডি প্রায়ই এসব দৃশ্য দেখতেন এবং তা ভিডিও করতেন, যা পরে ভুক্তভোগীদের ব্ল্যাকমেল করার কাজে ব্যবহার করা হতো।
২০১৬ সালের একটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজও আদালতে উপস্থাপন করা হবে, যেখানে একটি হোটেলে ডিডিকে এক নারীকে মারধর করতে দেখা যায়। সিএনএন-এর প্রচারিত এই ভিডিওতে ডিডি তার তৎকালীন বান্ধবী, গায়িকা ক্যাসান্দা ‘ক্যাসি’ ভেন্টুরার ওপর হামলা চালান।
ঘটনার পর ডিডি ক্ষমা চেয়েছিলেন।
ক্যাসি ভেন্টুরা এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হতে পারেন। তিনি ২০১৯ সাল থেকে ডিডির বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করেছেন। যদিও সেই মামলার মীমাংসা হয়েছে, তবে এর বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।
এছাড়াও, আরও তিনজন নারী, যাদের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে, এবং ডিডির সহযোগী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরাও সাক্ষ্য দেবেন।
মামলার প্রধান প্রমাণ হিসেবে ২০১৬ সালের একটি ভিডিওকে দেখা হচ্ছে, যেখানে ডিডিকে একটি হোটেলে ক্যাসি ভেন্টুরার উপর হামলা করতে দেখা যায়। এই ভিডিওটি সিএনএন প্রকাশ করে এবং দ্রুত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ডিডির আইনজীবীরা এই ভিডিওর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, কিন্তু বিচারক সুব্রামনিয়ান তা আদালতে প্রদর্শনের অনুমতি দিয়েছেন।
গত মার্চ মাসে, ডিডির লস অ্যাঞ্জেলেস এবং মিয়ামির বাড়িতে ফেডারেল কর্তৃপক্ষ অভিযান চালায় এবং সেখান থেকে বহু ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ৯০ টেরাবাইটের ডেটা ছিল, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে কৌঁসুলিরা উল্লেখ করেছেন।
ডিডির আইনজীবীরা যুক্তি দিচ্ছেন যে, অভিযুক্ত নারীদের সঙ্গে ডিডির যৌন সম্পর্ক ছিল পারস্পরিক সম্মতিতে এবং এটি কোনো অপরাধ নয়। তারা আরও বলছেন, ভুক্তভোগীরা হয়তো আর্থিক লাভের জন্য মিথ্যা অভিযোগ করছেন।
ডিডির আইনজীবী মার্ক অ্যাগনিফিলো এই অভিযোগকে ‘অন্যায়’ এবং ডিডিকে ‘নির্দোষ’ প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। তিনি বলছেন, ২০১৬ সালের হোটেল-এর ঘটনাটি ছিল ভালোবাসার সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার ফল, এটিকে যৌন ব্যবসার প্রমাণ হিসেবে দেখা যায় না।
ডিডির জামিনের আবেদন ইতোমধ্যে তিনবার খারিজ হয়েছে, বিচারক সুব্রামনিয়ান সাক্ষীদের প্রভাবিত করার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করেছেন।
এই মামলার শুনানির সময়সীমা প্রায় দুই মাস।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা