যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন মধ্যপ্রাচ্য সফরকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে নতুন করে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্পের এই সফরে ইসরায়েলের স্থান না হওয়ায় অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, নেতানিয়াহু যেন অনেকটা ‘সাইড লাইনে’ চলে গেছেন। খবর সিএনএন।
ট্রাম্পের এই সফর শুরু হচ্ছে সৌদি আরব থেকে। এরপর তিনি কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাবেন। কিন্তু তাঁর ভ্রমণসূচিতে ইসরায়েলের নাম নেই। এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের কর্মকর্তারা তাঁদের উদ্বেগের কথা প্রকাশ করেছেন।
কারণ হিসেবে তাঁরা মনে করছেন, ট্রাম্প অতীতেও বিভিন্ন সময়ে ইসরায়েলকে পাশ কাটিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যেমন ইরানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে চুক্তি করা এবং হামাসের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করা ইত্যাদি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহু এখন ওয়াশিংটনে আগের মতো প্রভাব রাখতে পারছেন না। কারণ সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিশাল বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এমনকি তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্র কেনারও পরিকল্পনা করছে।
এই পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহুর জন্য ট্রাম্পকে প্রভাবিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প সম্ভবত এমন কোনো ফল চাচ্ছিলেন যা তিনি দেখাতে পারবেন, যেমন গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি অথবা মানবিক সহায়তা পাঠানোর মতো কোনো পদক্ষেপ। কিন্তু তেমন কিছু এখনো দৃশ্যমান না হওয়ায়, ইসরায়েলের প্রতি ট্রাম্পের আগ্রহ কম দেখা যাচ্ছে।
সম্প্রতি ট্রাম্প হামাসের সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে গাজায় আটক থাকা একজন মার্কিন নাগরিককে মুক্ত করেছেন। এর মাধ্যমে ট্রাম্প এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, এই পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহু মনে করছেন, ট্রাম্প হয়তো ইসরায়েলকে পাশ কাটিয়ে হামাসের সঙ্গে সরাসরি কোনো চুক্তিতে যেতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান শাপিরো সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “পারস্পরিক আস্থার অভাবে এমন সম্পর্ক বেশি দিন টেকে না।” তাঁর মতে, ট্রাম্প এখন গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
নেতানিয়াহু যেহেতু অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেন, তাই হোয়াইট হাউস সম্ভবত এখন ইসরায়েলের সঙ্গে পরামর্শ না করেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি অবশ্য ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর মধ্যে কোনো মতবিরোধের সম্ভাবনাকে অস্বীকার করেছেন। তাঁর মতে, ট্রাম্প ইসরায়েলের জন্য অনেক কিছু করেছেন এবং তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক চমৎকার।
তবে ইসরায়েলি গণমাধ্যমে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। সেখানকার একটি প্রভাবশালী দৈনিকের প্রথম পাতায় প্রকাশিত একটি কার্টুনে দেখা যায়, ট্রাম্প একটি স্যুপ বানাচ্ছেন, আর নেতানিয়াহু উদ্বিগ্ন হয়ে তা দেখছেন। এমনকি ট্রাম্পের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে পরিচিত পত্রিকা ‘ইসরায়েল হায়োম’-ও এই বিষয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।
তাদের এক কলামে বলা হয়েছে, “নেতানিয়াহু ট্রাম্পের কাছ থেকে যা চেয়েছিলেন, সম্ভবত তাই পেয়েছেন।”
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই সফর নেতানিয়াহুর জন্য একটি কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। কারণ ট্রাম্প যদি হামাসের সঙ্গে কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেন, তাহলে ইসরায়েলকে হয়তো সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে চাপ দেওয়া হবে।
এই পরিস্থিতিতে, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ট্রাম্পের পদক্ষেপগুলো কতটা সফল হবে, এখন সেটাই দেখার বিষয়। একইসঙ্গে, নেতানিয়াহু এই পরিস্থিতিতে কীভাবে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে পারেন, সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন