যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান ও ইরাকে ব্রিটিশ বিশেষ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বিবিসি’র অনুসন্ধানী প্রোগ্রাম ‘প্যানোরামা’য় প্রচারিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গত এক দশকের বেশি সময় ধরে ব্রিটিশ সেনারা সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।
এতে ৩০ জনেরও বেশি প্রত্যক্ষদর্শী, যারা হয় বিশেষ বাহিনীর সঙ্গে কাজ করেছেন, অথবা তাদের আশেপাশে ছিলেন, তারা এসব অভিযোগ করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্রিটিশ বিশেষ বাহিনী, বিশেষ করে স্পেশাল এয়ার সার্ভিস (এসএএস) এবং নৌবাহিনীর স্পেশাল বোট সার্ভিসের (এসবিএস) সদস্যরা আফগানিস্তান ও ইরাকে আটককৃতদের, এমনকি শিশুদেরও, বেআইনিভাবে হত্যা করেছে। সেনাদের বিরুদ্ধে নিহতদের শরীরে অস্ত্র রেখে তাদের সন্ত্রাসী প্রমাণ করারও অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ উঠেছে, অভিযানে নিহতদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সৈন্যদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলত। এমনকি, অনেক সময় তারা ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা নিরীহ মানুষদেরও হত্যা করত।
একজন সাবেক সেনা সদস্য বলেছেন, হত্যার এই প্রক্রিয়াটি “আসক্তি”-র মতো হয়ে দাঁড়িয়েছিল এবং সেনারা যেন এই অনুভূতির নেশায় বুঁদ ছিল।
প্রতিবেদনে জানা যায়, ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন আফগানিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের কাছ থেকে নাইট-রেইড এবং হত্যাকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগের কথা জেনেছিলেন। যদিও ক্যামেরনের একজন মুখপাত্র এইসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে বিবিসি’র হাতে আসা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সৈন্যদের মধ্যে ‘খুন’ করার সংখ্যা গোনার একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলত। এমনকি, কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা ঘটনার বিবরণী গোপন করতে মিথ্যা প্রতিবেদন তৈরি করতেন।
একজন সাবেক সেনা সদস্যের ভাষ্যমতে, এই হত্যাকাণ্ডগুলো এতটাই সাধারণ ছিল যে, ব্রিটিশ বিশেষ বাহিনীর কমান্ডের সবাই সে সম্পর্কে জানত।
যুদ্ধবন্দী বা আহত সৈন্যদের হত্যা করা আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। নিহতদের মধ্যে এমন অনেকে ছিলেন যারা কোনো ধরণের প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখতেন না।
যুদ্ধাপরাধের এই অভিযোগগুলো আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথা বলছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা